পৃথিবীর সবচেয়ে দামী কয়েকটি বস্ত।
- প্লুটোনিয়াম
- পাইনাইট
- ট্রিটিয়াম
- হীরা
- ক্যালিফোরিয়াম
- অ্যান্টিম্যাটার
প্লুটোনিয়াম:
পৃথিবীর সবচেয়ে দামি বস্তুর মধ্যে অন্যতম একটি হলো প্লুটোনিয়াম। এটি একটি রূপালি ধূসর বর্ণের তেজস্ক্রিয় রাসায়নিক পদার্থ। যার প্রতি গ্রামের দাম ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। একটু প্লুটোনিয়াম দিয়ে পুরো একটা গ্রামের বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। এছাড়া, প্লুটোনিয়াম বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহার করা হয়, বিশেষ করে পারমাণবিক শিল্পে। পৃথিবী জুড়ে এই পদার্থের চাহিদা অনেক বেশি। যার কারনে এর দাম ও অনেক বেশি। তবে প্লুটোনিয়াম খুঁজে পাওয়া খুব সহজ নয়। এই পর্যন্ত ল্যাবে সংগ্রহ করা প্লুটোনিয়াম খুবই সামান্য।
পাইনাইট:
দামী বস্তুর মধ্যে আরেকটি হলো পাইনাইট। এটি এতটাই দুর্লভ যে বিশ্বের খুব কম মানুষই এর অস্তিত্বের কথা জানে। এটি কমলা বা লালচে বাদামী বর্ণের একপ্রকার খনিজ পাথর। সর্বপ্রথম এটি আবিষ্কৃত হয়েছিল প্রায় ৬৫ বছর আগে। বিশ্বে পাইনাইটের মাত্র শ’দুয়েক পাথর আছে মাত্র। এর প্রতি গ্রামের মূল্য ৯ হাজার ডলার। পাইনাইট হলো হীরার চেয়ে আকর্ষণীয়, দূর্লভ এবং দামি একটি বস্তু। যার রং একটু অন্যরকম। কেবলমাত্র তানজানিয়া এবং শ্রীলংকায় এটি পাওয়া যায়। এই রত্ন গহনার কাজে খুব বেশি ব্যাবহার করা হয়। বিল গেটসের মতো মানুষের পক্ষেই কেবল এটি ক্রয় করা সম্ভব। কারণ কেবলমাত্র এক গ্রামের মূল্যই ১৭ লাখ টাকা।
ট্রিটিয়াম:
দামি ঘড়ি, ওষুধ এবং রেডিও থেরাপিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে ট্রিটিয়াম নামক এক পদার্থ। এটি এক ধরনের রেডিও এক্টিভ পদার্থ। যেটা হাইড্রোজেন-৩ নামেও পরিচিত। ট্রিটিয়াম বিশ্বের চতুর্থ মূল্যবান ধাতু। এক গ্রাম ট্রিটিয়ামের মূল্য প্রায় ১৮ দশমিক ৯ লাখ টাকা। সামান্য পরিমাণে ট্রিটিয়াম প্রাকৃতিকভাবে পৃথিবীতে পাওয়া যায়। তবে বেশিরভাগ ট্রিটিয়াম কৃত্রিম উপায়েই সৃষ্টি করা হয়। বিদ্যুৎ শক্তি সঞ্চয়ের জন্য ট্রিটিয়াম দিয়ে বৃহৎ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি তৈরি করা হয়।
হীরা:
হীরা হলো বিশ্বের তৃতীয় মূল্যবান ধাতু। এর সম্পর্কে কমবেশি প্রায় সকলের ধারনা আছে। তবে আমরা সকলে এটাকে শুধু গহনা হিসেবেই চিনি। কিন্তু গহনা ছাড়াও হীরা দিয়ে অনেক মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও বানিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে বর্তমানে। প্রকৃতিতে পাওয়া সবচেয়ে কঠিন ও দামী বস্তু এটি। হীরা একটি উজ্জ্বল ও শক্ত ধরনের পদার্থ। এটি প্রচণ্ড তাপ ও চাপেও নষ্ট হয় না। এর সবচেয়ে বড় গুন হলো, অন্য কোনো বস্তু দিয়ে হীরার ওপর আঁচড় কাটা যায় না। তবে বিশ্বজুড়ে হীরার চাহিদা অনেক বেশি হলেও পৃথিবীতে কম পাওয়া যায়। হীরা বিভিন্ন রঙয়ের হয়ে থাকে। এক ক্যারেট হীরার প্রতি গ্রামের মূল্য ৩৪ দশমিক ৮১ লাখ টাকা
ক্যালিফোর্নিয়াম:
মূলমানে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ক্যালিফোরিয়াম। এর প্রতি গ্রামের মূল্য প্রায় ১৭০ দশমিক ৯১ কোটি টাকা। ১৯৫০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার রেডিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয়ে চারজন বিজ্ঞানী যৌথভাবে ক্যালিফোরিয়াম আবিষ্কার করেন। প্রতি বছর মাত্র অর্ধেক গ্রাম ক্যালিফোর্নিয়াম তৈরি করা হয়।
এটি একটি রেডিও অ্যাকটিভ ধাতব রাসায়নিক উপাদান। যা রূপা ও সোনা শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। মাটির নিচের খনিজ তেলের স্তর শনাক্ত করতেও ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও ক্যালিফোরিয়াম দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে বিমানবন্দরে মালপত্র না খুলেই তা পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়।
যেহেতু এটি তেজস্ক্রিয় পদার্থ তাই এটি নিঃসন্দেহে মানবজাতির জন্য ক্ষতিকর, তবে চিকিৎসার কাজেও এর ব্যবহার রয়েছে। ক্যান্সারের মতো জটিল কিছু রোগের চিকিৎসায় এর সফলতা রয়েছে।
অ্যান্টিম্যাটার:
পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান আর দূর্লভ বস্তুটির নাম হলো অ্যান্টিম্যাটার। একটি পরমাণুর গাঠনিক কণাগুলোর বিপরীত চার্জযুক্ত মৌলিক কণিকা সমন্বয়ে গঠিত পরমাণু বা বস্তুই হলো অ্যান্টিম্যাটার। এ পদার্থটি বাস্তব জগতের কোনো বস্তুর সংস্পর্শে এলে ধ্বংস হয়ে যায়। কেবল আলো থাকে।
এ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা মাত্র ৩০৯ টি অ্যান্টিম্যাটার আইটেম বানাতে পেরেছেন। খুবই অল্প পরিমাণে বানানো এই বস্তুটির দাম এ জন্যই এত বেশি। এটির প্রতি গ্রামের মূল্য ৬ দশমিক ২৫ লাখ কোটি ডলার। বর্তমানের প্রযুক্তি অনুসারে মানবজাতির সবাই মিলে যদি একটানা পরিশ্রম করে যায় তাহলে এক বছরে মাত্র এক গ্রাম অ্যান্টিম্যাটার তৈরি করা সম্ভব হবে!