পৃথিবীর সবচেয়ে ঠান্ডা স্থান কোনগুলো?
বাংলাদেশের জলবায়ু বেশি ঠান্ডাও নয়, আবার গরমও নয়, অর্থাৎ এক কথায় যাকে বলা হয় নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু। অন্যদিকে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা মাইনাস ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এটি গড় তাপমাত্রা, কিন্তু পৃথিবীর সব জায়গায় নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু বা এমন মাপমাত্রা থাকে না। পৃথিবীতে এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে তীব্র শীতের কারণে বেঁচে থাকাও মুশকিল হয়ে যায়।যেখানকার তাপমাত্রা মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামতে পারে। আবার এমন অনেক স্থান আছে যেখানে তীব্র গরমে অতিষ্ঠ মানুষের জীবন।
গত পোস্টে আমরা জেনেছি পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম দেশগুলো সম্পর্কে। আজ জানবো পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম স্থানগুলো, সেখানে কি সবসময় ঠান্ডা থাকে, নাকি বছরের কোনো নির্দিষ্ট সময়ে ঠান্ডা বাড়ে? এসব নিয়েই আজকের আলোচনা।
সূচিপত্র (Table of content)
- অ্যান্টার্কটিকার মালভূমি
- অ্যান্টার্কটিকার ডোম ফুজি অঞ্চল
- অ্যান্টার্কটিকা আমুন্ডসেন-স্কট দক্ষিণ মেরু স্টেশন
- ডোম আর্গাস
- রাশিয়ার ভারখোয়ানস্ক শহর
- গ্রিনল্যান্ডের ক্লিঙ্ক রিসার্চ স্টেশন
- সাবেরিয়ার ওয়মিয়াকন গ্রাম
- গ্রিনল্যান্ডের আইস
অ্যান্টার্কটিকার মালভূমি
বর্তমানে পৃথিবীর সব থেকে ঠান্ডা অঞ্চল হল পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার মালভূমি। শীতল এ স্থানটি সবসময় বরফে ঢাকা থাকে। স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, সেখানকার তাপমাত্রা মাইনাস ৯৩ ডিগ্রিতে পৌঁছায়। আবার কখনো কখনো মাইনাস ৯৮ ডিগ্রিও হতে দেখা গিয়েছে।
অ্যান্টার্কটিকার ডোম ফুজি অঞ্চল
তালিকার দ্বিতীয়তে রয়েছে অ্যান্টার্কটিকার ডোম ফুজি অঞ্চল। জানা যায়, ২০১০ সালে প্রায় মাইনাস ৯৩ দশমিক ২ ডিগ্রি তাপমাত্রা নিয়ে ডোম ফুজিই পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল স্থান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল। এ অঞ্চলের তাপমাত্রা বেশির ভাগ সময়ই -৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকে।
অ্যান্টার্কটিকা ভস্টক রিসার্চ স্টেশন পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল স্থানগুলোর একটি। এখানে তাপমাত্রা সর্বনিম্ন মাইনাস ৮৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়েছিল। দিনে ২২ ঘণ্টারও বেশি সূর্যালোক উপভোগ করা মানুষেরা আবার অন্য সময় এখানে সামান্য সূর্যের আলোরও দেখা পান না।
অ্যান্টার্কটিকা আমুন্ডসেন-স্কট দক্ষিণ মেরু স্টেশন
এরপর আছে অ্যান্টার্কটিকা আমুন্ডসেন-স্কট দক্ষিণ মেরু স্টেশন। এখানের তাপমাত্রা সর্বনিম্ন মাইনাস ৮২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছেছিল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার মিটার ওপরে অবস্থিত স্টেশনটি তাপমাত্রা এতোটকই কম যে, এখানে যাঁরা গবেষণা করতে আসেন, তাঁরা বছরে মাত্র একটি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে পারেন। এমনকি গ্রষ্মের দিনেও এখানকার তাপমাত্রা মাইনাস ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয় না।
ডোম আর্গাস
এ তালিকায় রয়েছে অ্যান্টার্কটিকার মালভূমির অন্য একটি স্থান ডোম আর্গাস। একটা সময় বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, হয়তো এইটিই পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম স্থান। এ স্থানের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাইনাস ৮২ দশমিক ৫ ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছেছিল।
এছাড়াও আছে আলাস্কার ডেনালি অঞ্চল। এখানে রয়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬ হাজার মিটারেরও বেশি উচ্চতায় অবস্থিত উত্তর আমেরিকার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গটি। ২০০৩ সালে এই শৃঙ্গের শীর্ষের কাছাকাছি অবস্থিত একটি আবহাওয়া স্টেশনের তাপমাত্রা ছিল সর্বনিম্ন মাইনাস ৭৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা সে সময় যুক্তরাষ্ট্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড গড়েছিল।
রাশিয়ার ভারখোয়ানস্ক শহর
শীতলতম স্থানের তালিকায় আরো রয়েছে রাশিয়ার ভারখোয়ানস্ক শহর। রাশিয়ার এই শহর আর্কটিক সার্কেলের মধ্যে অবস্থিত। এটি উত্তর মেরুর সবচেয়ে শীতল স্থানগুলোর মধ্যে এটি একটি। শীতকালে এ শহরের তাপমাত্রা প্রায় মাইনাস ৬৯ ডিগ্রিতে নেমে যায়। এখানের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৬৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এখানকার তাপমাত্রা বেশ ওঠানামা করে। গ্রীষ্মকালে শহরটির তাপমাত্রা প্রায় ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়।
গ্রিনল্যান্ডের ক্লিঙ্ক রিসার্চ স্টেশন
এছাড়াও আছো বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডের ক্লিঙ্ক রিসার্চ স্টেশন, যা সব সময় বরফের চাদরে ঢাকা থাকে। শীতল এ স্থানে বাসিন্দা খুব কম, তবে বিজ্ঞানীরা গবেষণার প্রয়োজনের খুব কষ্ট করে থাকেন এখানে। এ স্থানের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৬৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সাবেরিয়ার ওয়মিয়াকন গ্রাম
এরপর আছে রাশিয়ার পূর্ব সাবেরিয়ার ওয়মিয়াকন গ্রাম। জানা যায়, সবচেয়ে শীতলতম স্থানগুলোর মধ্যে এটিতেই স্থায়ীভাবে মানুষ বসবাস করে। দুটি উপত্যকার মধ্যে এই গ্রামটি অবস্থিত হওয়ায় শীতল বাতাস এখানে আটকে থাকে, যা পরিস্থিতিকে আরো গুরুতর করে তোলে। এখানের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৬৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে তাপমাত্রা মাইনাস ৫৫ ডিগ্রির নিচে নেমে গেলে এখানকার স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
গ্রিনল্যান্ডের আইস
তালিকার সর্বশেষে আছে গ্রিনল্যান্ডের আইস। এখানের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৬৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ১৯৫৪ সালে নর্থ আইসে সবচেয়ে কম তাপমাত্রা রেকর্ড করেছিল। জেনে রাখা ভালো, বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২০১৮ সালে। সে সময় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রাতেই দেশের মানুষ কেঁপে উঠেছিল। তাহলে ভেবে দেখুন, মাইনাস ৬৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার চেয়ে নিম্ন তাপমাত্রার ঠান্ডা কতোটা ভয়াবহ হতে পারে।