যে সেতুতে দাঁড়ালে নারীর গর্ভে সন্তান আসে, পর্তুগালের শয়তানের সেতু।
সেতুটিতে দাঁড়ালে নিঃসন্তান নারীর গর্ভে আসবে সন্তান। শুধু তাই নয়, এমনও শোনা গেছে, সেতুতে দাঁড়িয়ে কেউ যদি পেছনে তাকায় তবে তার মৃত্যু অনিবার্য। বলা হচ্ছে পর্তুগালের মন্টেলেগ্রি এবং ভেইরা ডি মিনহোর সীমানায় অবস্থিত একটি সেতুর কথা। অধিকাংশ মানুষ যে সেতুটিকে ‘শয়তানের সেতু’ হিসেবে চিনে।পর্তুগালের এই ‘শয়তানের সেতু’ নিয়ে এমন রহস্যময় অনেক লোক কাহিনি প্রচলিত আছে যা শুনে অবাক হবে যে কেউ।
দীর্ঘ সময় ধরে এসব লোক কাহিনী আতঙ্কিত করে আসছে পর্তুগালের এক বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষদের। তাই কোন মানুষ রাত হলে ভয়ে সেতুটির আশেপাশে যায় না। মধ্যযুগে পাথর দিয়ে খরস্রোতা রাবাগাও নদীর ওপর তৈরি করা হয়েছে সেতুটি। সেতুটি একবারে নিচে থেকে সোজা উপরের দিকে উঠে গিয়েছে, যা দেখতে অনেকটা বৃত্তের ব্যাসার্ধের মতো। স্থানীয়দের মতে, এমন অদ্ভুত আকারের সেতু কখনো মানুষের পক্ষে বানানো সম্ভব না। তাদের দাবি, শয়তানই সেতুটি তৈরি করেছে এবং এখানো ঘটা বিস্ময়কর সব ঘটনা শয়তানেরই কর্মকান্ড।
শোনা যায়, একবার এক ডাকাত ঝড়ের রাতে পাহাড়-জঙ্গল পেরিয়ে রাবাগাও নদীর কাছে এসে আটকে যায়। কারণ রাবাগাও নদী পার হওয়ার জন্য কোন সেতু ছিল না৷ তখন ডাকাতটি নিরুপায় হয়ে শয়তানের নামে প্রার্থনা শুরু করে। শয়তান কাছে তখন ভক্তের ডাকে সাড়া দিয়ে খরস্রোতা রাবাগাও নদীর ওপর একটি সেতু বানিয়ে দেয়। তবে ডাকাতটি নদী পার করে দিলে বিনিময়ে মৃত্যুর পর নিজের আত্মা শয়তানকে অর্পণ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। এমনকি সেতু পার হওয়ার সময় একবারও পেছনে তাকানো যাবে না। তাকলেই মুহূর্তে উধাও হয়ে যাবে সেতু এবং তার মৃত্যু অনিবার্য। শয়তানের শর্ত মতো এক দৌড়ে সেতু পার হয়ে যায় ডাকাত।
বিস্ময়কর এই ঘটনার কয়েক বছর পর ডাকাতটির কঠিন অসুখ হয় এবং তার শয়তানকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা মনে পড়ে যায়। তখন তিনি একজন ধর্মযাজককে ডেকে সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলেন। ঘটনা শুনে যাজক রাবাগাও সেতুতে হাজির হন, তবে ধর্মযাজক হয়ে না, ভিখারি সেজে। সেখানে দাঁড়িয়ে ডাকাতের মতো তিনিও শয়তানের নামে প্রার্থনা শুরু করেন এবং আগেরবারের মতই শয়তান ভক্তের ডাকে সাড়া দেয়।
শয়তান এলে যাজক তাকে নদীর ওপর সেতু তৈরি করে দিতে অনুরোধ করেন এবং এবং বিনিময়ে নিজের আত্মার আহুতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। যাজকের অনুরোধে শয়তান পুনরায় সেতুটি তৈরি করে। সেতু সম্পূর্ণ তৈরি করা হয়ে গেলে যাজক শয়তানের ওপর পবিত্র পানি ছিটিয়ে দেন এবং শয়তান ধ্বংস হয়ে যায়।
এসব প্রচলিত ঘটনায় মানুষের মনে ভয় তৈরি হয়। তাই রাত হলে কেউ আর সেতুটির কাছে আসে না। কেবল নিঃসন্তান নারীরাই মাঝরাতে সেতুতে আসেন বলে শোনা যায়। সেতুতে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় যদি কোন ব্যক্তি সেতুর ওপর দিয়ে যান এবং দড়ি বেঁধে গ্লাসে করে পানি তুলে ওই নারীকে দেন, তবে ঐ নারীর কোলে সন্তান আসে বলে বিশ্বাস করেন স্থানীয়রা।
তবে এসব ঘটনা কল্পকাহিনী, এগুলোর বিজ্ঞানসম্মত কোন ব্যাখ্যা বা প্রমাণও নেই। কিন্তু সেতুটিতে ঠিকভাবে আলো পড়লে সেটা নিচের পানিতে প্রতিফলন ঘটিয়ে বৃত্তের মতো যে আকৃতি ধারণ করে, তা মানুষকে শয়তান এবং সেতুর সম্পর্ক নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে।