শীতে কতদিন গোসল না করে থাকা যায়?
শীতে গোসল করার মাত্রা কমিয়ে দেওয়ার বিষয়টা কি আসলেই উচিত? শীতকালে কী প্রতিদিন গোসল করতেই হবে? কিংবা শীতকালে প্রতিদিন গোসল না করলে অথবা চার পাঁচ দিন পরে করলে কী হয়? তাই নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা। চলুন জেনে নেই কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
আবহাওয়া অত্যধিক ঠান্ডা থাকার কারণে বেশিরভাগ মানুষই শীতে গরম পানি দিয়েই গোসল সারেন। কেউ কেউ তো দু-চারদিনও গোসল না করেই পার করে দেন। মূলত প্রতিদিন গোসল করাটা জরুরি কি না, তা আসলে নির্ভর করে আমাদের পরিবেশ ও ত্বকের ওপর। যাদের ত্বক সংবেদনশীল, যারা পানি সংরক্ষণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন এবং শিশুদের প্রতিদিন গোসল না করলেও সমস্যা নেই। আবার যেসব শিশু খুব বেশি অগোছালো থাকে, যারা আর্দ্র স্থানে বাস করেন, ঘন ঘন ব্যায়াম করেন, প্রচুর পরিশ্রম করেন তাদের নিয়মিত গোসল করা উচিত।
তবে ঠিক কত দিন পরপর গোসল করতে হবে, সে বিষয়ে কোনো ধরাবাঁধা নিয়মের কথা বলেননি বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে ত্বকের ধরন অনুসারে দুই দিন বা তিন দিন পরপরও গোসল করা যেতে পারে।
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন গোসল করলে শরীরে জমে থাকা বিভিন্ন জীবাণু ও ময়লাও সহজে পরিষ্কার হয়ে যায়। ফলে শরীর পরিষ্কার থাকে।
তবে যদি কেউ মনে করেন যে তিনি প্রতিদিন না করে একদিন পর পর গোসল করবেন, তাতেও কোনো সমস্যা নেই। বরং সেটা একদিক থেকে শরীরের জন্য ভালোই বলা যায়। কারণ, গোসল না করলে কিছু ভালো ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয় শরীরে, যা টক্সিনের হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করে। শীতের সময় ত্বক ভালো রাখতে এসব ব্যাকটেরিয়া খুবই জরুরি। কিন্তু গোসল করলে সেই ব্যাকটেরিয়াগুলোর মৃত্যু হয়। আর এতে শরীরেরই ক্ষতি হয়।
প্রতিদিন গোসলের ফলে নখেরও ক্ষতি হয়। কারণ গোসল করার সময় নখ পানি শোষণ করে, যা ধীরে ধীরে নখকে নষ্টের দিকে ঠেলে দেয়। এছাড়া অনেকেই প্রতিদিন অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান দিয়ে গোসল করে থাকেন। কিন্তু এই সাবানগুলি কেবল খারাপ ব্যাকটেরিয়াই নয়, ত্বকের উপকারী ব্যাকটেরিয়াও ধ্বংস করে দেয়। যার ফলে ত্বকের অত্যন্ত ক্ষতি হয়। তাই শীতকালে সপ্তাহে তিন থেকে চার বারের বেশি গোসল না করার পরামর্শ দেন চর্মরোগ চিকিৎসকরা।
আমেরিকার চর্মরোগ চিকিৎসকরা বলছেন, যদি আপনার শরীরে নোংরা না জমে, তাহলে প্রতিদিন গোসল না করলেও চলে। শীতে গোসলের ক্ষেত্রে পানির ব্যাপারটাও মাথায় রাখতে হবে। শীতের হাত থেকে বাঁচতে অনেকে গোসলে অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার করে থাকেন। এতে করে ত্বকের ক্ষতি হয়, ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যায়। ফলে এসময় চর্মরোগ দেখা যায় বেশি। বিশেষ করে অ্যাজমা, সোরিয়াসিস, দাদ’সহ বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ বেড়ে যায় শুধু গরম পানিতে গোসলের কারণে।
প্রতিদিন গরম পানিতে গোসল করার কারণে হজমের ও নানান সমস্যা হতে পারে। বেড়ে যেতে পারে কোষ্টকাঠিন্যের সমস্যাও। দীর্ঘদিন গরম পানি ব্যবহার করা হলে রুক্ষ হয়ে পড়ে চুলও। আবার শীতে ঠান্ডা পানিতে গোসলের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকুন। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত ঠান্ডা আবহাওয়ায় যদি আপনি বরফ শীতল পানিতে গোসল করেন সেক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
আবার যাদের ঠাণ্ডা, কাশি, সাইনাস ও বাতের ব্যথার সমস্যা আছে, তাদের জন্য ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা উচিত নয়। এজন্য পানি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় করার কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা। তাহলে ত্বকের জন্য সবচেয়ে ভালো। তাই সপ্তাহে মাত্র কয়েকবার গোসল করলেই আপনি থাকবেন সুস্থ। আর গোসল করলে বেশি ঠান্ডাও না আবার গরমও নয় এমন পানিতে গোসল করুন।
যুক্তরাজ্যের ক্যাডোগান ক্লিনিকের পরামর্শক ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডেরিক ফিলিপস বলেন ‘সামাজিক কারণে আমাদের দিনে একবার গোসল করা জরুরি। কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি নয়।’ তবে প্রতিদিন গোসল করলে মানসিকভাবে শান্তি পাওয়া যায় এবং নিজেকে সতেজ লাগে। কিন্তু প্রতিদিন গোসল শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় নয়, আবার দীর্ঘদিন গোসল না করে থাকাও উচিত নয়।