যে গ্রামের প্রত্যেক পুরুষের দুজন করে স্ত্রী!
গ্রামের অবস্থান
পাক-ভারত সীমান্তের রাজস্থানের বাড়মের জেলার অন্তর্গত এই গ্রামটি! মাত্র ৬০০ জন নিয়ে গঠিত এই ছোট্ট গ্রামটির বেশিরভাগ মানুষই মুসলমান। তবে ইসলামে একের অধিক স্ত্রী রাখার বিধান থাকলেও এখানে ২য় স্ত্রী রাখার উদ্দেশ্যই সন্তান জন্মদান! মূলত ধর্মীয় অনুভূতির চেয়ে কুসংস্কার আর অন্ধবিশ্বাসের জন্যই এখানকার প্রত্যেক পরিবারই বহু বছর ধরে দুই বিয়ের রীতি মেনে আসছে।
যেভাবে শুরু হয়েছিলো এ অদ্ভুত রীতি
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, দ্বিতীয় বিয়ের পরই পরিবারে আসে নবজাতক শিশু। তাই বাবা হতে হলে এই গ্রামে ২য় বিয়ে করতেই হবে। দ্বিতীয় বিয়ের পর বংশ রক্ষা হয় বলেই দ্বিতীয়বার বিয়েকে ওই গ্রামে শুভ কাজ বলেই মনে করা হয়। গ্রামে বসবাসকারী প্রত্যেক পুরুষেরই দু’বার বিয়ে করা বাধ্যতামূলক।
দেরাসর গ্রামের সব পুরুষের বাড়িতেই রয়েছেন দু’জন করে স্ত্রী। কিন্তু, তাতে তাদের কোনো সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হয় না।আধুনিক সভ্যতায় যেখানে প্রথম স্ত্রী থাকাকালীন দ্বিতীয় বিয়ে করলে একজন পুরুষ কে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়, কিংবা আইনের দৃষ্টিতে যা অপরাধ বলে গণ্য সেখানে দেরাসর গ্রামে সম্পূর্ণ আলাদা, দুই বিয়ে না করাটাই এখানে বেআইনি বলে মনে করা হয়। অনেক পরিবারে তো এক প্রকার জোর করেই ছেলেদের দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়।
কোনো পুরুষ যদি প্রচলিত এই রীতির বিরুদ্ধে কাজ করেন তা হলে তার বিরুদ্ধে পুরো গ্রামের লোকজন একজোট হয়। শাস্তি হিসেবে নিজের পরিবার, ক্ষেত্র বিশেষে গ্রামও পরিত্যাগ করতে হয় তাকে। আরো অদ্ভুত ব্যাপার হলো দ্বিতীয় বিয়েতে প্রথম পক্ষের স্ত্রীদের কোনো ক্ষোভ থাকে না। তারা সতীনের সঙ্গে বেশ মানিয়ে নেন। তাদের সাথে মিলেমিশে সংসার করেন। এমনকি নিজের সন্তানের মতো মানুষ করেন দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভের সন্তান।
দুই বিয়ে করার আরো কারণ
পূর্ব পুরুষদের এই পরম্পরাই এখনো মেনে চলছে গ্রামের বাসিন্দারা! অবশ্য দেরাসরের এ রীতির পেছনে আরো একটি কারণও রয়েছে আর তা হলো গ্রামটির পানির স্বল্পতা।পানীয়জল এর অভাবকেও একটা যুক্তি হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন গামের মানুষজন। পানি আনতে হলে এখানের নারীদেরকে অন্তত পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে যেতে হয়।
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তারা এ কাজ করতে পারে না। সে কারণেও দ্বিতীয় বিয়ে করে থাকেন পুরুষরা। তখন অন্য স্ত্রীই ঘরের সব কাজ সামলান। সেক্ষেত্রে প্রথমজনকে সেভাবে স্ত্রীর কোনো অধিকারই দেয়া হয় না। তাদের জীবন কাটে বাড়ির কাজের মেয়ে হিসেবে। আর এজন্যই প্রথম স্ত্রীকে বলা হয় ‘জল স্ত্রী’।
পরবর্তীতে প্রথম স্ত্রী পুরো জীবনে আর সন্তানধারণের অধিকার পান না। এমনকি দ্বিতীয় বিয়ের পর স্বামীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনেরও অধিকার নেই তাদের। ঠিক কী কারণে প্রথম পক্ষের স্ত্রীদের ক্ষেত্রে এরকমটা ঘটে তা এখনো জানা যায়নি। তবে তাদের মনে এই অন্ধবিশ্বাস বা কুসংস্কার পেরেকের মতোই গেঁথে গিয়েছে।
আধুনিক যুগে এসেও এখনো মেনে চলছে এ অদ্ভুত রীতি
তাই এই আধুনিক যুগেও প্রচলিত রীতিটি মেনে চলতে তাদের ব্যতিক্রম হয় না। এখনও এমন ঘটনাই ঘটে চলেছে গ্রামটিতে। সুশিক্ষার অভাব আর সঠিক ধর্মজ্ঞানের ব্যবহার নেই বলেই দেরাসর গ্রাম মুসলিম হলেও আজো অন্ধকারেই রয়ে গেছে।