মরুভূমিতে যেভাবে বেঁচে থাকে উট।
মরুভূমিতে অনেক বিচিত্র প্রজাতির প্রাণীর দেখতে পাওয়া যায়। যাদের মধ্যে অন্যতম একটি হলো উট। রহস্যে ঘেরা শারীরিক গঠনের কারণে হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্কতম জায়গায় টিকে আছে প্রাণীটি। উটকে বেশ শান্ত প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এদেরকে ধৈর্য ও সহনশীলতার প্রতীকও বলা হয়ে থাকে। চলুন জেনে নেই এ প্রাণীটির সম্পর্কে অজানা সব তথ্য।
উটকে মরুভূমির জাহাজ বলার কারণ
বিশাল বালুময় মরুভূমিতে মধ্যে কোন রাস্তা না থাকায় একসময় আরব দেশগুলো ছিল যান চলাচলের অনুপযোগী। তাই সেসব দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য, যাতায়াতসহ সকল প্রকার যোগাযোগের জন্য একমাত্র উটের উপরই নির্ভর করতে হতো। তাই উটকে মরুভূমির জাহাজ বলা হয়ে থাকে।
মরুভূমিতে যেভাবে বেঁচে থাকে উট
দৈহিক গঠনের বিভিন্ন পরিবর্তনের কারনেই মরুভূমির মতো রুক্ষ পরিবেশেও নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছে উট। উটের রয়েছে ৪ টি পা। লম্বা, শক্তিশালী পায়ে নরম প্যাড থাকার কারণে মরুভূমির বালিতেও তারা সহজে হেঁটে যেতে পারে। তাদের শরীরের ঘন লোম গরমের দিনে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে এবং রাতের তীব্র শীতে শরীরকে গরম রাখতে সাহায্য করে। উটের কানে পশম থাকার কারণে ধুলোবালি প্রবেশ করতে পারেনা। এছাড়া উটের পায়ের পাতাও এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এদের জুতার সোলের মতো পাকে সোল প্যাডে বলে, যার কারণে উট প্রচণ্ড গরম বালুর মধ্যে অনায়াসে হেঁটে যেতে পারে। প্রায় দুই মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট প্রতিটি পায়ের পাতায় চর্বি ও নমনীয় ফাইবারের পুরু আস্তরণ থাকে, যা লোম দিয়ে ঢাকা।
মরুভূমিতে বাস ও চলাচলের জন্য নিজেকে উপযুক্ত করে নেয় এরা। এরা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে একটানা পানি না খেয়ে থাকতে পারে। উট দেহের এক চতুর্থাংশ ওজনের সমান পানি দেহ থেকে খরচ করতে পারে এবং একবারে প্রচুর পানি পান করে প্রয়োজন মেটাতে পারে। বালিঝড়ের থেকে বাঁচার জন্য এরা চোখের লম্বা অক্ষিপত্র কাজে লাগায় এবং প্রয়োজনের সময় নাকের ফুটো বন্ধ রাখতে পারে। এসব মিলিয়ে উট মরুভূমিতে চলার উপযোগী প্রাণী।
মরুভূমিতে কয় ধরনের উট দেখা যায়?
মরুভূমিতে সাধারণত এক কুঁজ বিশিষ্ট এবং দুই কুঁজ বিশিষ্ট উট দেখতে পাওয়া যায়। অনেকের ধারণা উটের কুঁজে পানি জমা থাকে। কিন্তু এ ধারনাটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে কুঁজ হচ্ছে এদের শরীরের চর্বির ভাণ্ডার। মরুভূমিতে খাবার যখন কম থাকে তখন তাদের কুঁজের সঞ্চিত চর্বিকে পুষ্টি ও শক্তিতে রূপান্তরিত করে। প্রচন্ড গরমে খাবার এবং পানির অভাব পুরণ করতে পারে এই কুঁজ।
তবে মরুভূমিতে খাবার খুঁজে না পেলেও উটের খুব বেশি দুশ্চিন্তা করতে হয় না। কারণ পানি এবং খাবার ছাড়াই দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারে তারা। অবশ্য পিঠে বোঝা চাপানো হলে দিনের সংখ্যা কমে আসে।পানির ব্যাপারে উট খুব মিতব্যয়ী। খুব অল্প পরিমাণে মুত্র ত্যাগ করে এরা। প্রচন্ড গরমেও তাদের শরীর থেকে ঘাম নির্গত হয় না। এছাড়া অন্যান্য প্রাণীদের তুলনায় শ্বাস প্রশ্বাসেও তুলনামূলকভাবে কম পানি ব্যয় করে।
মধ্য ও পূর্ব এশিয়ার মরুভূমিগুলোতে দুই কুঁজ বিশিষ্ট উট দেখতে পাওয়া যায়। এদেরকে বেকট্রিয়ান উট বলা হয়। এক কুঁজ বিশিষ্ট উট সাহারা মরুভূমিতে দেখা যায়। এ ধরনের উটকে ড্রমিডারি বলা হয়।
উটের খাবার
উটের প্রধান খাদ্য হলো মরুভূমিতে জন্মানো ঘাস, পাতা এবং ডালপালা। এমনকি যেকোনো কাঁটাযুক্ত গাছপালা চিবিয়ে সাবাড় করতে পারে এরা, যা অন্য কোনো প্রাণীর সাধ্যে নেই।
এদের হজমশক্তিও বেশ ভালো। যেকোনো খাবার নিমিষেই হজম করে ফেলতে পারে। এজন্য পরিপাকতন্ত্রে বেশ কয়েকটি অংশ আছে। প্রথম দুটি ভাগে খাবারগুলো আংশিকভাবে ভেঙে যায়। অন্য অংশে প্রবেশ করার পর হজমপ্রক্রিয়া শুরু হয়।
উটের দুধ
উটের দুধ বর্তমান বিশ্বে খুবই জনপ্রিয়। তবে গরুর দুধের তুলনায় এর দাম প্রায় ৩০ গুণ বেশি। এক লিটার উটের দুধের দাম গড়ে ৩০ ডলার, যা বাংলাদেশী টাকায় তা প্রায় ২ হাজার ৫৫০ টাকা। দাম বেশি হওয়ার পেছনে অবশ্য কারণও আছে। আর তা হলো উটের দুধ গুনে মানে গরুর দুধের চেয়ে এগবয়ে। এছাড়া গরুর দুধের তুলনায় এই দুধে চর্বির মাত্রা অনেক কম। বলা যায় গরুর দুধের প্রায় অর্ধেক। পাশাপাশি উটের দুধে ভিটামিন সি আছে ১০ গুণ বেশি। শুধু ভিটামিনই নয়, পটাসিয়াম ও ক্যালসিয়ামের পরিমাণও বেশি। এজন্যই বর্তমানে অনেকেই উটের দুধকে ওষুধের বিকল্প হিসেবে নিয়েছেন।