দেশ পরিচিতি: নাউরু
পরিচিতি
নাউরুর অতীত
পৃথিবীর তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র নাউরু। তবে আয়তনে ছোট হলেও অর্থনীতিতে একসময় বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী রাষ্ট্র ছিলো এটি। কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক পাখির অভরায়ণ্য ছিল দেশটি। পাখিদের মলে প্রচুর পরিমান ফসফেট বিদ্যামান। ফলে হাজার হাজার বছর ধরে এসব মল জমে ফসফেটে পরিণত হয়।
নাউরুর ফসফেট ছিল সবচেয়ে উন্নতমানের। যে কারণে পরবর্তীকালে এটি তাদের জন্য ‘স্বর্ণের খনি’ হয়ে ধরা দেয়। কারণ কৃষিতে ব্যবহার্য রাসায়নিক সারের জন্য ফসফেট প্রয়োজনীয় উপাদান।আর সেগুলো তারা বিক্রি করতে থাকে পশ্চিমা বিশ্বের কাছে। এতে সহজেই সরকারের হাতে আসতে থাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ।
১৯৭০-৮০–এর দশকে দেশটিতে ছিল ফসফেট খনির রমরমা ব্যবসা। এর মাধ্যমে প্রতিবছর আয় হতো ১০০-১২০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার। নাউরুর জনগণের মাথাপিছু আয় এত বেশি ছিলো যে, তাদেরকে কোন ধরনের ট্যাক্সও দিতে হতো না । এমনকি জনগনের জন্য শিক্ষা, চিকিৎসা, সংবাদপত্র, যানবাহন সব ছিল ফ্রি।
সঠিক পরিকল্পনা থাকলে এই বিপুল অর্থ দিয়ে তারা চলতে পারতো কয়েক শতাব্দী। পরবর্তী প্রজন্ম নিয়েও ভাবতে হতো না তাদের। উন্নত চিকিৎসা, উচ্চ শিক্ষা, মানসম্মত বাসস্থান- এসব কাজে খরচ করার জন্য এই অর্থ ছিলো যথেষ্ট। কিন্তু অর্থকে সঠিক কাজে ব্যবহার করতে পারে নি নাউরু কর্তৃপক্ষ। সেই সময় রাষ্ট্রের বড় বড় পদে নিয়োগের জন্য অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, নিউজিল্যান্ডের নাগরিকদের নিয়ে আসা হত। রাস্তায় বিলাসবহুল গাড়ি চলত। নাউরুর বিমান সংস্থা এয়ার নাউরুর অধীনে ছিল ৭ টা বোয়িং বিমান। যা দিয়ে জনগণ অস্ট্রেলিয়া, ফিজি, সিঙ্গাপুর যেত মার্কেট করতে।
কৃষিকাজ আর মাছ ধরা ছেড়ে তারা অলস জীবন যাপন করতে লাগলো। এমনকি ফসফেট খনিতেও নাউরুর অলস বাসিন্দারা কাজ করতনা। খনিতে কাজ করার জন্য অন্যান্য দেশ থেকে শ্রমিকরা আসত। জমির মালিক ফসফেট বিক্রির একটা অংশ পেত। বলতে গেলে বিনা পরিশ্রমে তাদের কাছে টাকা আসত।
যার ফলে ফলমুল থেকে যাবতীয় সকল প্রকার খাদ্যই বাইরে থেকে আমদানী করে আনা শুরু করলো তারা। নিজেদের ঐতিহ্যবাহী সবজি আর মাছের বদলে খেতে শুরু করল অস্বাস্থ্যকর খাদ্য। এসব খেয়ে নাউরুতে দেখা দিল স্থূলতা আর ডায়াবেটিকস। পৃথিবীর সবচেয়ে মোটা মানুষদের বসবাস নাউরুতে। এখানকার প্রতিটা মানুষই অস্বাভাবিক রকমের মোটা।
দুর্দিনের শুরু
অবশেষে তাদের এই ফসফেটের সম্পদ একসময় ফুরিয়ে আসে। ৯০ দশকের শুরুর দিকেই নাউরুর ফসফেটের খনি শেষ হয়ে আসে। তবে সম্পদের পরিমাণ কমে গেলেও তাদের বিলাসিতার অভ্যেসের পরিবর্তন হলো না। আগের মত বিলাসী জীবন চালু রাখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা ঋণ করা শুরু হল।
অর্থ ধার নিয়ে তারা রাষ্ট্র চালাতে থাকে। একসময় ঋণের বোঝা এতোটাই বেড়ে যায় যে, সেটি বহন করা নাউরুর পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব ছিলো না। নতুন করে কৃষিকাজ করবে সে সুযোগও ছিলো না।
খনিজ সম্পদ তুলতে গিয়ে দেশটির আর কোনো আবাদি জমি অবশিষ্ট রইলো না। পুরো দ্বীপ ধূসর চুনাপাথরের চূড়ায় ভরা চাষাবাদের অযোগ্য একটি দেশে পরিণত হয়। আর তাই বাজেয়াপ্ত হয়ে যায় পুরো জাতির ভবিষ্যৎ। পথে বসতে বাধ্য হয় নাউরু জাতি। বর্তমান তাদের না আছে কোনো আবাদি জমি, না আছে জনগনের কোনো নিশ্চিত জীবন। সকলের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতেই এখন দেশটির সরকার হিমশিম খাচ্ছে।