দেশ পরিচিতি: বার্বাডোস।
সাদা বালুর রুপকথার দেশ বার্বাডোস
রাজধানী
দেশটির বৃহত্তম শহর প্রধান বন্দর ও রাজধানী হলো ব্রিজটাউন। এটি দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত।এটি বার্বাডোসের প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসাবেও ব্যবহার করা হয়। শহরটিতে বেশিরভাগ সরকারী দপ্তর এবং মন্ত্রণালয় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সহ বৃহৎ বৃহৎ সব আধুনিক মন্ত্রণালয়ের ভবনগুলিও এখানে। এটি পাইকারি ও খুচরা বাণিজ্য ও বাণিজ্যের বাণিজ্যিক কেন্দ্রও বটে।
বার্বাডোসের অর্থনীতি
বহু বছর ধরে বার্বাডোসের অর্থনীতির প্রধান পণ্য ছিলো আখ। এক সময়ে চিনি রফতানির উপর অনেকটাই নির্ভরশীল ছিলো দেশটির অর্থনীতি। বার্বাডোসের বর্তমান অধিবাসীদের মধ্যে বেশিরভাগই চিনি উৎপাদনের কাজ করানোর জন্য নিয়ে আসা আফ্রিকান দাসদের বংশধর।
১৯৭০ সালের পর থেকে এ দেশের অর্থনীতি বিভিন্ন খাতে বিস্তৃত হয়েছে। বিশেষ করে পর্যটন ও অর্থায়নের মতো বড় খাতগুলোতে। বর্তমানে দেশটির প্রধান শিল্প হলো পর্যটন শিল্প। উড়ন্ত মাছের রুপকথার দেশ বার্বাডোস পর্যটকদের কাছে খুবই প্রিয় একটি স্থান।
বার্বাডোসের সৌন্দর্য
বার্বাডোস দেশটিতে দিনের বেলায় সাবমেরিনে চড়ে সাগরতলের প্রবালপ্রাচীর আর রাতের বেলায় সাগরতলের জ্বলন্ত চোখওয়ালা মাছ দেখা যায়। আর বার্বাডোসের রাতের সৌন্দর্যের কথা তো বলাই বাহুল্য। এটি নাকি এতোটাই চমৎকার যে, তা কয়েকদিনের জন্য অনেক পর্যটকেরই ঘুম হারাম করে দেয়! দেশটির দিন-রাতের এই চমৎকার সৌন্দর্য রোমাঞ্চপ্রেমী পর্যটকদের যেন এক বর্ণিল স্বপ্নের জগতে পৌঁছে দেয়।
উড়ুক্কু মাছ
বার্বাডোসকে 'উড়ুক্কু মাছের ভূমি' ও বলা হয়। যার কারণ দেশটিতে বিপুল পরিমাণ উড়ুক্কু মাছ রয়েছে। পৃথিবীতে উড়ন্ত মাছের মোট ১৩টি প্রজাতির মধ্যে একটির দেখা পাওয়া যায় বার্বাডোসে। যা বার্বাডোসের জাতীয় মাছও বটে। এ মাছগুলোর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এরা ডানাবিশিষ্ট। এরা এতটাই পাতলা যে, ঘন্টায় ৭৫ কিলোমিটার বেগে প্রায় ৪৫ সেকেন্ড পর্যন্ত উড়তে পারে। উড়ুক্কু মাছ অত্যন্ত দামী ও বিলাসবহুল একটি খাবার। তা সত্ত্বেও বার্বাডোসের জনগণের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এ মাছ ভীষণ জনপ্রিয়।
শুধু বার্বাডোসের জনগণই নয়, অত্যন্ত নরম ও তুলতুলে এ মাছটি খেতেই প্রতিবছর ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকা থেকে অসংখ্য পর্যটক দেশটিতে যান। পেঁয়াজ, মরিচ, ক্যাপসিকাম ও রসুনের মিশ্রণে এ মাছটি কারি বানিয়ে স্টিমড রাইসের সাথে পরিবেশন করা হয়।
অন্যান্য জনপ্রিয় খাবার
বার্বাডোসের জনপ্রিয় আরেকটি খাবার হলো সী এগ। এটি মূলত সজারুর মত দেখতে সমুদ্রের নিচে জন্মানো একপ্রকারের জীবন্ত উদ্ভিদ। বস্তুটি ডিমের মত খোলস বিশিষ্ট। এর মাঝখানে ফাটিয়ে ভেতরের ক্রিমের মত নরম অংশটি কাঁচা খাওয়া হয়।
বার্বাডোসের অন্য একটি অদ্ভুত খাবার হলো গুয়াভা চিজ। এটি মূলত পেয়ারা থেকে উৎপন্ন পনির। সাধারণত আমরা দুধ থেকে উৎপন্ন পনিরের কথা জানি। কিন্তু মজার বিষয় হলো, বার্বাডোসই পৃথিবীর প্রথম ও একমাত্র দেশ যারা পেয়ারা থেকে পনির উৎপন্ন করেছে।
অ্যালকোহল
মদ রপ্তানিতেও বিশ্বের বাজারে বেশ পরিচিতি বার্বাডোসের। বিশেষ করে ভারতীয়দের কাছে। তাদের বেশিরভাগ মদের চাহিদা পূরণ হয় বার্বাডোস থেকেই। প্রতিবছর সারাবিশ্বে প্রায় ৫৭ মিলিয়ন ডলারের রাম নামক একপ্রকারের মদ রপ্তানি করে তারা।
অবাক করা তথ্য হলো বার্বাডোসে ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুরা তাদের মদ পান করার অনুমতি পায়। তাও আবার তাদের বাবা-মায়ের উপস্থিতিতেই! যদিও তা সেখানকার আইন সম্মত নয়। সেখানকার আইন অনুযায়ী, অ্যালকোহল শুধুমাত্র ১৮ বছর বয়স থেকে অনুমোদিত হয়।
স্বাস্থ্যবানদের দেশ
বার্বাডোসের মানুষের অসুস্থতা যেমন কম, তেমনি মৃত্যুহারও অনেক কম। যার পেছনে মূল কারণ সেখানকার মানুষ বাইরের খাবারের চেয়ে হোমমেড খাবার বেশি পছন্দ করে। ১৮৪৫ সাল পর্যন্ত বারবাডোস ছিলো পৃথিবীর একমাত্র স্বাস্থ্যবান দেশ, যেখানে বছরে প্রতি ৬৬ জনে মাত্র একজন মারা যেত।