দেশ পরিচিতি: ভানুয়াতু

ক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের শান্ত জলের মাঝে গড়ে উঠা ছোট্ট দ্বীপ ভানুয়াতু। মাত্র আড়াই লাখেরও কম জনসংখ্যার দেশটির অধিবাসীরা "পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ" এর খেতাব পেয়েছে। মেলেনেশিয়ানরা দেশটির মূল অধিবাসী। এখানে ইউরোপীয়দের প্রথম আগমন ঘটে ১৬০৬ সালে। ভানুয়াতুর রাজধানীর নাম পোর্ট-ভিলা।

সুখী মানুষের দেশ ভানুয়াতু

ভানুয়াতুর ইতিহাস

১৮৮০ সালে ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য উভয়েই দ্বীপটির উপর তাদের অধিকার দাবি করে। পরবর্তীতে ১৯০৬ থেকে স্বাধীনতা লাভের আগে পর্যন্ত ভানুয়াতু যৌথভাবে ফরাসী ও ব্রিটিশ শাসনাধীন ছিলো। তখন এর নাম ছিলো নিউহিব্রাডিস। অবশেষে ১৯৮০ ফাদার ওয়াল্টার লিনিরির নেতৃত্বে তারা স্বাধীনতা পায়। তিনি দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

গঠন

সমুদ্রের মধ্যে থাকা অনেকগুলো ছোট্ট দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই দেশ। দেশটির আয়তন মাত্র ১২ হাজার ১৪৯ বর্গকলোমিটার। পোর্ট ভিলা দেশটির প্রধান শহর ও রাজধানী। ভানুয়াতু তে ছোট বড় ৮৩টি দ্বীপের মধ্যে ৬৫টিতে জনবসতি রয়েছে। এখানকার অধিকাংশ দ্বীপই পর্বতময়। দেশটিতে অনেকগুলো আগ্নেয়গিরি আছে। এর মধ্যে তান্না আইল্যান্ডে আছে মাউন্ট ইয়াসুর জীবন্ত আগ্নেয়গিরি। যুগের পর যুগ, এমনকি বর্তমানেও তার অগ্ন্যুৎপাত চলছে। মাউন্ট মানরো নামক আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত তো অল্প কিছু দিন আগের ঘটনা।

জনসংখ্যা

আয়তনের তুলনায় এখানকার জনসংখ্যা নিতান্তই অল্প। ২০২৩ সালের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভানুয়াতুর মোট জনসংখ্যা তিন লাখ ৩৫ হাজার ৯০৮ জন।

ভানুয়াতুর ভাষা

দেশটির মোট জনসংখ্যা কম হলেও প্রচলিত ভাষার সংখ্যা ১১০টি। এমনকি জাতীয় ভাষাও তিনটি! বিসলামা, ইংরেজী ও ফরাসী। তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আর পড়াশোনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় ইংরেজী ও ফরাসী। দেশটিতে গড়ে প্রতি ২০০০ মানুষের জন্য একটি করে ভাষা রয়েছে। ঘনত্ব বিচারে তাই এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভাষার দেশ।

ভানুয়াতুর অর্থনীতি

ছোট এই দ্বীপদেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি দাঁড়িয়ে আছে মূলত কৃষি, মৎস্য আর পর্যটনের ওপর। দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। প্রাকৃতিক সম্পদ নেই বললেই চলে। 

অদ্ভুত ব্যাপার হলো এ দেশের বেশিরভাগ মানুষই শহুরে যান্ত্রিকতা ও মেকি আধুনিক জীবনের চেয়ে সহজ সরল জীবন বেশি পছন্দ করে। পূর্বপুরুষদের পেশা জেলে জীবনকেই তারা পেশা হিসেবে গ্রহন করে আনন্দ পায়। মাটির সাথে এখানকার অধিবাসীদের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। মাটি তাদের অনুপ্রেরণা যোগায়। শুধু কৃষির ওপর জীবিকা নির্বাহ করে বেঁচে আছে অসংখ্য মানুষ। 

সংস্কৃতি

দেশটির সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য অনন্য। একজনের সম্মান নির্ধারিত হয় কতটা পরিমাণ সে দান করে তার ওপর ভিত্তি করে। শূকুর এখানকার সবচেয়ে দামি পশু। প্রভাবশালীরা বেশি বেশি শূকুর দান করেন। ভানুয়াতুর  প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের মধ্যে খ্রিষ্টানদের প্রাধান্য বেশি। ইহুদিও রয়েছে কিছু। সেখানে দুই শতাধিক মুসলমানও বাস করে।

সুখী মানুষের এ দেশটিতে কিছু অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করা যায়। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো এখানে কিছুদিন আগে পর্যন্ত মানুষের মাংস খাওয়ার রীতি প্রচলিত ছিলো। আজও প্রত্যন্ত অঞ্চলের কিছু মানুষের মধ্যে এই রীতি রয়ে গেছে।

ভানুয়াতুতে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হলো ফুটবল। এছাড়াও দেশটিতে বেশ কিছু ঐতিহ্যগত খেলাও প্রচলিত রয়েছে।

দর্শনীয় বিষয়

নির্জন দ্বীপের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য আর শান্ত পরিবেশের স্নিগ্ধতা উপভোগ করতে পর্যটকরা ভিড় জমান ভানুয়াতুতে। এখানে দেখা মিলবে অপার জলরাশির সাথে পাথুরে উপকূল ও বেলাভূমির খেলা,  বাড়তি পাওনা হিসেবে আগ্নেয়গিরির রূপ পরিদর্শন তো আছেই।

ভানুয়াতুর হাইডওয়ে দ্বীপে একটি পোস্ট অফিস আছে। এটি নির্মিত হয়েছিল ২০০৩ সালে। আন্ডারওয়াটার এই পোস্টবক্সটি সমুদ্রের তিন মিটার গভীরে অবস্থিত। সেখান থেকে ওয়াটারপ্রুফ বিশেষ পোস্টকার্ড সরবরাহ করা হয়, যাতে চিঠিগুলো না ভিজে।

এখানে ঘুরতে আসা অনেক পর্যটকই সেখানে চিঠি পোস্ট করে থাকেন।

জলের নিচে পোস্টঅফিস

নিজ হাতে যারা সমুদ্রের নিচের এই পোস্ট অফিসে চিঠি পোস্ট করতে চায় তাদের ডাইভিং স্যুট সরবরাহ করা হয়।  ডুবুরীর পোশাক পরা একজন ডাকহরকরা প্রতিদিন একই সময়ে বক্সটি খুলে চিঠিগুলো বের করে আনে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর সহজ সরল জীবনের এক প্রশান্তিকর দ্বীপ হলো ভানুয়াতু। প্রতি বছর প্রায় ৬০ হাজারের বেশি পর্যটক দেশটিতে ভ্রমণ করে। ভানুয়াতুর সরকার তাই পর্যটনকে কেন্দ্র করে অর্থনীতিকে শক্ত করার প্রচেষ্টা করছে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url