দেশ পরিচিতি : বলিভিয়া

দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যভাগের একটি দেশ বলিভিয়া। আন্দাস পর্বতমালার অনেক উঁচুতে অবস্থিত বলে এটিকে পৃথিবীর ছাদ নামেও ডাকা হয়। এর মোট আয়তন ১০ লাখ ৯৮ হাজার ৫৮১ বর্গকিলোমিটার। দেশটির পশ্চিমে পেরু ও চিলি, দক্ষিণে আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়ে, উত্তর ও পূর্বে ব্রাজিল অবস্থিত।

বলিভিয়া দেশ সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য।

বলিভিয়ার রাজধানী

দেশটির রাজধানীর নাম লা পাজ। এটি বিশ্বের সর্বোচ্চতম রাজধানী। এর অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১১,৭৪০ ফুট উপরে। শহরটি থেকে বলিভিয়ার অ্যামাজন রেইনফরেস্ট অঞ্চল পর্যন্ত বেশ কিছু গ্রামে যাওয়ার পথ হলো ইউঙ্গাস রোড। এই রোডটি প্রায়শই বৃষ্টি এবং কুয়াশায় ডুবে থাকে। কারণ পৃথিবীর সবথেকে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়া দেশের মধ্যে বলিভিয়া একটি। এ পথটি ”ডেথ রোড” নামেও পরিচিত। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক সড়কগুলোর মধ্যে একটি। এখানে খুব ছোট একটি ভুলও ভ্রমণকারীদের সরাসরি ৪০০০ থেকে ১৫০০০ ফুট নিচে মাটিতে আছড়ে ফেলতে পারে। লা পাজ ছাড়াও বলিভিয়ার আরো একটি রাজধানী আছে। এটি হলো সুক্রে আইন বিচার বিভাগীয় রাজধানী।

বলিভিয়ার ভাষা

বলিভিয়ার অফিসিয়াল ভাষা হলো স্প্যানিশ। এ ছাড়া দেশটিতে আরো কিছু ভাষা প্রচলিত আছে। যেমন: কইচুয়া, আইমারা, গাওয়ারনি বা বলিভীয়। এসব ভাষায়ও সেখানকার জনগণ কথা বলে থাকে।

ধর্ম

এখানকার বেশির ভাগ নাগরিক খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারী। যাদের মধ্যে আবার ৯৫ ভাগ হলো রোমান ক্যাথলিক। আর বাকি ৪ ভাগ প্রোটেস্ট্যান্ট ও বাহাই। আর এক ভাগ হলো অন্যান্য ধর্মের অনুসারী।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

বলিভিয়ায় রয়েছে অপূর্ব মায়াবি সব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। দরিদ্র এ দেশটির অধিকাংশ পর্যটন স্থান প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমণপিপাসুরা দেশটিতে ভিড় জমান প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাক্ষী হওয়ার জন্য। তেমনই কিছু স্থানের সাথে পরিচিত হয়ে নিন:-

লেক মিনচিন

নৈসর্গিক সৌন্দর্য এ দেশটিকে এক আশ্চর্য মোড়কে আবৃত করে রেখেছে। হাজার হাজার বছর আগে এখানে বিশাল এক হ্রদ ছিল, যার নাম ‘লেক মিনচিন’। কিন্তু মরু অঞ্চলীয় খরার কারণে একসময় এই হ্রদ পুরোপুরি শুকিয়ে গিয়ে জন্ম দেয় বিশাল এক মরুভূমির। যার উপরের আবরণ ঢেকে যায় লবণে। আর মধ্যভাগে জমা হয় লিথিয়াম। ধারণা করা হয়, ‘সাদা সোনা’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া লিথিয়ামের ৫০-৭০ ভাগ মজুদ রয়েছে বলিভিয়ায়।

সালার দি ইউনি

বলিভিয়ায় আছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক আয়না। যার নাম হলো ‘সালার দি ইউনি’। এটি মূলত দেখতে বিশাল আয়নার মতো একটি জায়গা। চমকপ্রদ এই প্রাকৃতিক অঞ্চল বিশ্বের সর্ববৃহৎ লবণ সমভূমি। এক পশলা বৃষ্টি পড়ে যখন পুরো আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়, তখন বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তৈরি হওয়া আয়নার চমৎকার প্রতিচ্ছবিতে পুরো আকাশ ধরা দেয় পায়ের নিচে।


সালার দ্য ইউনি

লেক টিটিকাকা

বলিভিয়ার রহস্যে ভরা দ্বীপ লেক টিটিকাকা। এটি শুধু দেশটির সবচেয়ে সুন্দর লেকই নয়, তাদের ট্রেজার্ড ল্যান্ডমার্ক এবং একই সাথে বিশ্বের সর্বোচ্চ নৌবাহী লেক। এটি একটি ভাসমান দ্বীপ। অনেকের মতে এই লেকের জলের নিচে হারিয়ে যাওয়া শহর রয়েছে। লেক টিটিকাকা ও তাঁর বিপুল জলরাশির নিচে নিমজ্জিত প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন আজো এক বিরাট রহস্য। অবশ্য গবেষকরা এর জলের নিচে প্রাচীন মন্দিরের সন্ধান পেয়েছেন। তাই অনেকেই ধরে নিয়েছেন এর নিচে সত্যি সত্যি প্রাচীন কোনো শহর ডুবে আছে।


লুনার সালাদা সল্ট হোটেল

বলিভিয়ায়  'লুনার সালাদা সল্ট হোটেল’ নামে এক আশ্চর্য জনক হোটেল রয়েছে। অবাক করা বিষয় হলো হোটেলটির নির্মাণকাজে ব্যবহৃত প্রায় সব জিনিসই লবণের তৈরি। দেয়াল, আসবাবপত্র, সিলিং সবই বানানো হয়েছে লবণের ব্লক দিয়ে। এমনকি মেঝেও লবণের ক্রিস্টাল দিয়ে তৈরি।


সান পেড্রো জেলখানা

বলিভিয়ার সান পেড্রো জেলখানাও কম আশ্চর্যের ব্যাপার নয়। একে আসলে জেলখানা না বলে শহর বললেই ভালো শোনায়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি এটা যে, অনেকে স্বেচ্ছায় থাকছেন এই জেলখানায়। টাকা দিয়ে কিনে নিতে হয় সান পেদ্রো জেলের আরাম-আয়েশ আর থাকার ব্যবস্থা। টেলিভিশন, ওয়াইফাই এমনকি ছোটখাটো সুইমিং পুলও আছে এই জেলখানায়।


বিয়ে নিয়ে অদ্ভুত রীতি

যে কোনো দেশে বিয়ের পর মেয়েরা চাইলে স্বামীর নামের সাথে মিলিয়ে নিজের পদবী দেয়। কিন্তু বলিভিয়ায় তা সম্পূর্ণ বিপরীত। বলিভিয়ার পুরুষরা বিয়ের পর তাদের স্ত্রীর নামের সাথে মিল রেখে নিজের নামের সাথে পদবী যোগ করে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url