সামুদ্রিক প্রাণী কাটলফিশ।

বিচিত্র এক সামুদ্রিক প্রাণীর নাম 'কাটলফিশ’। নামের সঙ্গে ‘ফিশ’ যুক্ত থাকলেও এটি আসলে কোন মাছ নয়। বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে অন্যান্য মাছের চেয়ে বেশ কিছু ভিন্নতা আছে এদের মধ্যে। এই প্রাণীর কিছু বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মানুষের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মিল খুজে পাওয়া যায়। চলুন জেনে নেই এ প্রাণীটি সম্পর্কে।


কাটলফিশ

শ্রেণি

কাটলফিশ মূলত সেপালোপডস প্রজাতির একটি প্রাণী। স্কুইড, অক্টোপাস, ক্যাটলফিস এবং নটিলাস এরা একই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত।


দৈহিক গঠন

এদের শরীরের আকারের তুলনায়, বেশ বড় মস্তিষ্ক রয়েছে। এদের মোট আটটি শুড় থাকে। কোনো শুঁড় একবার কেটে গেলে, তা আবার নতুন করে গজায়। এদের শরীরের আকৃতি লম্বা এবং চোখদুটো বেশ বড়। এদের রক্তের রঙ কিন্তু লাল নয়, বরং নীলচে সবুজ ধরনের। এই প্রাণীর তিনটি হৃদয় থাকে। আর থাকে এক জোড়া কমলা রঙের ফুলকা। এই ফুলকাগুলো সমুদ্রের জল থেকে অক্সিজেন ফিল্টার করে এবং তা এদের রক্তপ্রবাহে সরবরাহ করে। কাটলফিশের দেহ অত্যন্ত নরম প্রকৃতির। অক্টোপাসের মতো দেহের রঙও পরিবর্তন করতে পারে এই প্রাণী। এদের শরীরে, ক্রোমাটোফোর নামক ,লক্ষ লক্ষ ছোট পিগমেন্ট কোষ রয়েছে। যা প্রাণীটিকে যে কোনও সময়, তার রঙ এবং প্যাটার্ন পরিবর্তন করতে দেয়।


বাসস্থান ও খাবার

কাটলফিশ সাধারণত অগভীর গ্রীষ্মমন্ডলীয় বা নাতিশীতোষ্ণ উপকূলীয় জলে বাস করে থাকে এবং শীতকাল আসলে গভীর জলে চলে যায়। আবার শীত শেষে উপকূলীয় জলে ফিরে আসে। এটি সাধারণত ছোট আকারের কাটলফিশ, স্কুইডসহ বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ খেয়ে থাকে। তাদের দেহে এক ধরনের শক্তিশালী চিমটা রয়েছে। যা দিয়ে শিকার করে থাকে।

আয়ু

কাটলফিশের আয়ু খুব কম থাকে। অধিকাংশই প্রায় দুই বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচে।


প্রজনন

কাটলফিশ শুধুমাত্র তাদের জীবনের শেষের দিকে এসে প্রজনন করে এবং প্রজননের পর মারা যায়। প্রজননের জন্য এরা সাধারণত বসন্ত এবং গ্রীষ্মকাল বেছে নেয় এবং প্রায় ১০০ থেকে ৩০০ ডিম উৎপাদন করে। মজার ব্যাপার হলো, তারা কার সাথে, কোথায়, কতদিন আগে মিলিত হয়েছিল, তা মনে রাখতে পারে। আরো অদ্ভুত ব্যাপার হলো, একই সঙ্গীর কাছে তারা বারবার ফিরে যায় না। প্রতিবারই মিলনের জন্য নতুন সঙ্গী খুঁজে নেয়। গবেষকরা মনে করেন, এটি তাদের জিনকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। যার ফলে, প্রানীটির মধ্যে বৈচিত্রতা সৃষ্টি হয়।

মানুষের চেয়ে বেশি স্মৃতিশক্তি কাটলফিশের

মানুষের চেয়ে বেশি স্মৃতিশক্তি কাটলফিশের

সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, মানুষের চেয়ে বেশি স্মৃতিশক্তি রয়েছে কাটলফিশের! শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এমনটাই জানিয়েছেন গবেষকরা। প্রাণীটির স্মৃতিশক্তি নিয়ে ,বিজ্ঞানীরা একটি গবেষণা করেছেন। এতে অংশ নেন  যুক্তরাজ্যের এক দল গবেষক।


গবেষণার জন্য তারা কাটলফিশের ২৪টি নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করেন। এদের মধ্যে ১২টি ছিলো অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং ১২ প্রাপ্তবয়স্ক। এগুলোর সাথে, ৯০ বছর বয়সি মানুষের স্মৃতিশক্তি পরীক্ষার তুলনা করা হয়। পরিক্ষার জন্য সাদা ও কালো কাপড় দিয়ে চিহ্নিত দুটি স্থানে রাখা হয়, তাদের পছন্দের খাবার জীবন্ত গ্রাস চিংড়ি ও কম পছন্দের খাবার কিং চিংড়ির টুকরা।


চার সপ্তাহ সময় ধরে করা এ পরীক্ষায় ,প্রতি তিন ঘণ্টা পর পর  খাবার এবং খাবারের স্থান পরিবর্তন করা হতো। দেখা গেছে স্থান ও চিহ্ন পরিবর্তন করা হলেও, সবচেয়ে পছন্দের খাবারটি বেছে নিতে অসুবিধা হয়নি প্রাণীগুলোর। বিশেষ করে বয়স্ক প্রাণীগুলো এক্ষেত্রে বেশি সফল।


গবেষকরা জানান, বয়স সাথে সাথে মানুষের স্মৃতিশক্তি ধীরে ধীরে কমে যায়। তখন মানুষ জীবনের বেশিরভাগ স্মৃতিই মনে রাখতে পারে না। কিন্তু কাটলফিশ তার ব্যতিক্রম। এদের ক্ষেত্রে বয়সের সাথে সাথে স্মৃতিশক্তি কমে না। বরং আরো বেশি অটুট থাকে। কাটল ফিশের জীবনের নির্দিষ্ট ঘটনার কোনো স্মৃতি ক্ষয় হয় না।


কোনো ঘটনা ,মৃত্যুর কয়েক দিন আগ পর্যন্তও মনে রাখতে পারে ,বৈচিত্র্যময় এই প্রাণী। এরা কবে কোথায় কি খেয়েছে সবই মনে রাখতে পারে। তাদের দেহে এখন কোন খাবার প্রয়োজন তাও বুঝতে পারে। এ ছাড়া মানুষের মতো ,আত্মনিয়ন্ত্রণের চর্চাও করে থাকে এই প্রাণী। এমনকি কোনো বিষয় শেখার ক্ষেত্রে, অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় খুব কম সময় নেয় কাটলফিশ।

Next Post Previous Post
1 Comments
  • নামহীন
    নামহীন ১১ জুলাই, ২০২৪ এ ৭:৫২ PM

    ধন্যবাদ

Add Comment
comment url