গোলাপি জলের হ্রদ লেক হিলিয়ার
গোলাপি জলের হ্রদ
এই লেকের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এর পানি পুরোটাই গোলাপী বর্ণের। তবে কোন রিফলেকশনের কারণে একে গোলাপী দেখায় না। অনেকই ভাববেন তাহলে লেকের পানি গোলাপি হলো কি করে? আসল সত্যিটা হলো, প্রাকৃতিকভাবেই এর রঙ এমন। এই লেকের জল দেখতে অনেকটা স্ট্রবেরি ফলের জুস এর মত। দূর থেকে দেখলে একে বাবলগামের মতো মনে হয়। যার কারণে অনেকে একে বাবলগাম লেক ও বলে থাকেন।
লেক হিলিয়ারের অবস্থান
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার মিডল আইল্যান্ডে লেক হিলিয়ারের অবস্থান। ১৮০২ সালে ক্যাপ্টেন ম্যাথু ফ্লিন্ডার্স নামের একজন নৌবাহিনীর কর্মী এবং চিত্রশিল্পী লেকটি প্রথম আবিষ্কার করেন।
হিলিয়ার লেকটি অন্য হ্রদের চেয়ে অনেকটা ছোট। এটি প্রায় ৬০০ মিটার লম্বা এবং ২৫০ মিটার চওড়া। এই হ্রদ চারপাশে রয়েছে পেপারওয়ার্ক এবং ইউক্যালিপ্টাস গাছের সারি।
লেকের পানি গোলাপি হওয়ার কারণ
বহু বছর ধরেই কীভাবে এই লেকের জলের রং গোলাপি হল তা নিয়ে নানা মতবাদ ও রহস্য প্রচলিত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, হিলিয়ারে লবণের পরিমাণ বেশি হওয়াতেই তার পানির রং গোলাপি। আবার কারো মতে, ওই লেকে মাইক্রোঅ্যালগি বেশি থাকাতেই তার রং গোলাপি।
২০১৫ সালে পানির রং নিয়ে গবেষণা শুরু করেন এক্সট্রিম মাইক্রোবায়োমি প্রজেক্ট এর এক দল বিজ্ঞানী। কয়েক বছর যাবত গবেষণার পর লেকের গোলাপি পানির রহস্য ভেদ করেছেন তারা।
তারা হিলিয়ারের পানির নমুনা সংগ্রহ করেন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেন, সেখানে রয়েছে দশ ধরনের ব্যাকটিরিয়া। যারা লবণাক্ত পরিবেশে থাকতে ভালবাসে। এছাড়াও এখানে বিভিন্ন প্রজাতির শ্যাওলার সন্ধান পাওয়া গেছে যেগুলো বেশির ভাগের রং সবুজ না হয়ে গোলাপী বা লাল রঙের।
তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, লেক হিলিয়ারের পানিতে রয়েছে এক বিশেষ ধরনের ব্যাকটিরিয়া। তাদের সংগ্রহকৃত নমুনা পানির ৩৩ শতাংশ জুড়ে ছিল স্যালিনিব্যাকটের রাবার নামের এই বিশেষ ব্যাকটিরিয়া। তাই তাদের দাবি, এ ব্যাকটেরিয়া আর অ্যালগির কারণেই এর পানির রঙ গোলপি। এছাড়া লেকের লবণাক্ত পরিবেশেরও কিছুটা প্রভাব রয়েছে।
এই হ্রদের জলে লবণের পরিমাণ অনেক বেশি। সাগরে সাধারণত যে পরিমাণ লবণ থাকে, তার চেয়ে আট গুণ বেশি লবণ আছে এর জলে। ডেড সি-এর মতো এখানেও গা ভাসিয়ে থাকা যায় নির্দ্বিধায়। ডুবে যাবার কোনও আশঙ্কা নেই। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে, এই হ্রদের লবণ বেশি পরিমাণে থাকলেও এখানে সাঁতার কাটা হলো নিরাপদ। এ লবন শরীরেে কোনো ক্ষতি করে না। এছাড়া হ্রদের পাশে সারিবদ্ধভাবে অবস্থান করছে পৃথিবীর শীতলতম ৬টি শুভ্র সৈকত, যা হিলিয়ারের সৌন্দর্যকে কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে দিয়েছে। তাই লেক হিলিয়ারে এই পানিতে নামার অপেক্ষায় থাকেন অনেক পর্যটক।
তবে লেকটি দুর্গম এলাকায় অবস্থিত হওয়ার কারণে এখানে পর্যটকদের ভিড় কম। ছোট্ট লেকটিতে পৌঁছনোও খুব একটা সহজ কাজ নয়। তাছাড়া লেক হিলিয়ার সবার জন্য উম্মুক্তও নয়। গবেষণার প্রয়োজনে অস্ট্রেলিয়া সরকার লেকটিকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করেছে। বিদেশি পর্যটক বা স্থানীয় কারও সেখানে যাওয়ার তেমন সুযোগ নেই। অবশ্য হেলিকপ্টারে করে উপর থেকে দেখার সুযোগ আছে সবার জন্য।
নামকরণ
এবার আসি লেক হিলিয়ারের নামের প্রসঙ্গে। এ নামের পেছনে রয়েছে এক অদ্ভুত রহস্য। মনে করা হয় যে এই লেকের জলের সংস্পর্শে এলেই মন ও শরীরের সমস্ত অসুখ ও ব্যথা কমে যায়। তবে এটি কেবল ধারণাই, এটি কতটুকু সত্যি তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, আগামী দিনগুলোতে লেকের পানির গোলাপি রং আরও ঘন হতে পারে।