ইতালির ফ্লোরেন্স শহর কেন বিখ্যাত?

বিশ্বের সুন্দর শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো ফ্লোরেন্স। এটি ইতালির তুস্কানি অঞ্চলে অবস্থিত। রাজধানী রোম থেকে উত্তর-পশ্চিমে প্রায় ২৩০ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। মধ্যযুগীয় ইউরোপীয় বাণিজ্য ও সেই যুগের ধনী শহরগুলোর মধ্যে ফ্লোরেন্স ছিল অন্যতম। শিল্প, স্থাপত্য ও ইতিহাসের শহরটিকে ‘মধ্যযুগের এথেন্স'ও বলা হয়। এটি একসময় রাজধানী ছিল।

ঐশ্বর্যশালী নগরী ফ্লোরেন্সকে ১৯৮৩ সালে ইউনোস্কো কর্তৃক ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করা হয়। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এই শহরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন। চলুন জেনে নেই শহরটির দর্শনীয় কিছু স্থান সম্পর্কে।


ইতালির ফ্লোরেন্স শহর

আর্নো নদী

ফ্লোরেন্সের প্রধান আকর্ষণ হলো আর্নো নদী। ২৪১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই নদীকে শহরের প্রাণও বলা যায়। এ নদীর দুপাশে ফ্লোরেন্সের দর্শনীয় কয়েকটি ব্রিজ নির্মিত হয়েছে। ইতালির সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহাসিক সেতু পন্টে ভেকিউর অবস্থান আর্নো নদীর উপর। সাতশো বছরের পুরনো সেতুটির বিশেষত্ব হচ্ছে, এটি কখনো যানবাহন চলাচলের জন্যে ব্যবহার করা হয়নি। এর উপর অনেক দোকানপাট ও বাড়িঘর আছে। আগে সেতুটির ওপর কসাইদের দোকান ছিল। পরে সেগুলো বন্ধ করে স্বর্ণাকারদের দোকান গড়ে ওঠে। এ সেতু নিয়ে প্রচুর গল্পগাথা প্রচলিত আছে। সেতুর ওপর আগে প্রচুর বন্ধ তালা দেখতে পাওয়া যেতো। প্রেমিক-প্রেমিকেরা এই সেতুটিতে  তালা বন্ধ করে চাবিটি আর্নো নদীতে ফেলে দিত। তাদের বিশ্বাস ছিল, এভাবে তাদের প্রেম দীর্ঘস্থায়ী হবে।

শহরজুড়ে প্রাসাদ

সাজানো গোছানো ফ্লোরেন্স শহরজুড়ে ছড়িয়ে আছে অনেকগুলো বড় প্রাসাদ। যেগুলোর সাথে জড়িয়ে আছে হাজারো গল্প কাহিনি। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ফ্লোরেন্স ক্যাথিড্রাল। শহরের একেবারে কেন্দ্রে এর অবস্থান। এটি নির্মাণ করতে প্রায় দেড়শো বছর সময় লেগেছিল। চারপাশে রয়েছে বিশালাকৃতির তোরণ, সুউচ্চ খিলান আর দানবাকৃতির গম্বুজ। কোন আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া এত বিশালাকারের গম্বুজ কিভাবে নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে তা সত্যিই বিস্ময়কর।

চতুর্দশ শতাব্দীতে নির্মিত পালাৎজো ভেচিও প্রাসাদটিও অবাক করার মতো। এটি বহু বছর ধরে ফ্লোরেন্সের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। প্রাসাদটি সাজাতে সে সময়ে শীর্ষস্থানীয় সব ডিজাইনার ও স্থপতিদের নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। এই প্রাসাদের কয়েকটি স্থানে গোপন সুড়ঙ্গ রয়েছে। সেগুলো দেখার জন্য আলাদা ভ্রমণের ব্যবস্থা রয়েছে।বর্তমানে প্রাসাদটি একইসাথে মিউজিয়াম ও টাউন হল হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।

পন্টে ভেচিও

এছাড়াও বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীনতম শিল্প জাদুঘর ইউফিজি গ্যালারিও রয়েছে ফ্লোরেন্সে। এটি অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। উফিজি গ্যালারিতে গেলে ইতালির চারুকলা সম্পর্কে জানা যাবে। সেখানে সংরক্ষিত রয়েছে অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিত্রকর্ম 'বার্থ অব ভেনাস'।

পন্টে ভেচিও সামান্য দূরে অবস্থিত পিটি প্যালেসও দেখার মতো। এটি পঞ্চদশ শতাব্দীতে নির্মিত। প্রাসাদটি ১৫৪৯ সালে মেডিসিরা ব্যাঙ্কার পিটিদের কাছ থেকে কিনে নেন। এখানে রয়েছে চিত্রকলা ও ভাস্কর্যের এক বিপুল সংগ্রহ। এছাড়া ঘরগুলোর কারুকার্যময় নির্মাণশৈলীও কম বিস্ময়কর নয়।

পিয়াৎজালে মিকেলাঞ্জেলো

দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে আরেকটি হলো পিয়াৎজালে মিকেলেঞ্জেলো। পুরো ফ্লোরেন্স শহরের সাইটভিউ দেখার জন্য অনেক পর্যটকই এখানে আসেন। এ স্থান থেকে পুরো ফ্লোরেন্স শহরটি ছবির মতো দেখা যায়। সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য দেখার জন্যও পিয়াৎজালে মিকেলেঞ্জেলোতে পর্যটকরা এসে থাকেন।

অ্যাকাদেমিয়া গ্যালারি

অ্যাকাদেমিয়া গ্যালারি নামে এই জাদুঘরটি ফ্লোরেন্সের অন্যতম আকর্ষণ। এখানে মিকেলেঞ্জেলোর অসাধারণ সৃষ্টি ‘ডেভিড’ এর মর্মর মূর্তিটি রয়েছে। যৌবনের শক্তি ও সৌন্দর্যের প্রতীক এ ভাস্কর্যটিতে পৃথিবীর সর্বকালীন একটি শ্রেষ্ঠ শিল্পকীর্তি বলে মনে করা হয়। 

ইউরোপীয় রেনেসাঁর আঁতুড়ঘর

ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের মিশেল ফ্লোরেন্সকে ইউরোপীয় রেনেসাঁর আঁতুড়ঘর বলা হয়। এ শহরেই দান্তে, বোকাচ্চিও, পেত্রাকের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিদের বসবাস ছিলো।  বিশ্ববিখ্যাত বৈজ্ঞানিক গালিলিও, শিল্পী-ভাস্কর্য লিওনার্দো-দা-ভিঞ্চি, মিকেলাঞ্জেলোর জন্মও এখানে। কয়েক শতাব্দী ধরে ফ্লোরেন্সে কাগজ তৈরির ঐতিহ্যও চালু আছে৷।উপহারের মোড়ক থেকে শুরু করে বই ছাপানোর জন্য ফ্লোরেন্টাইন কাগজের অনেক বৈচিত্র্য রয়েছে।

Next Post Previous Post
2 Comments
  • অম্রিতা
    অম্রিতা ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ এ ৯:৪২ AM

    এই অদ্ভুত অদ্ভুত নিউজগুলোর সন্ধান কোথায় পান আপু/ভাইয়া?

    • Unknown facts
      Unknown facts ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ এ ২:০৫ PM

      আমি বহুদিন যাবত কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে কাজ করছি একটা নিউজ চ্যানেলে। সেখান থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে নিজের ওয়েবসাইটের জন্য লিখি।

Add Comment
comment url