কোমল পানীয় খাওয়া কতটা স্বাস্থ্যকর

কোমল পানীয় খেতে কে না পছন্দ করে! পার্টি, পিকনিক কিংবা নিয়মিত আড্ডা সবখানে ছেলে থেকে বুড়ো সকলের কাছেই এর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। অনেকেই মনে করেন কোল্ড ড্রিংকস বা কোমল পানীয় পানে খাবার হজম হয়। কিন্তু আসলে কিন্তু তা নয়। মূলত কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস দ্রবীভূত থাকে বলে এটি ঢেঁকুর হিসেবে উঠে এসে কেবল পেটের গ্যাস থেকে কিছুটা আরাম দেয়।

কোমল পানীয় পান করলে সাময়িক তৃষ্ণা মেটে ঠিকই, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী বিবেচনায় এর প্রতিক্রিয়া কোনওভাবেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। গবেষণায় দেখা গেছে কোমল পানীয়তে কোনো পুষ্টি উপাদান নেই, বরং এর কারণে বিভিন্ন অসুখের সূত্রপাত হয়ে থাকে। এমনকি ডেকে আনতে পারে অকাল মৃত্যুও। এসব লোভনীয় পানীয়তে এমন কিছু উপাদান থাকে, যা মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গের জন্যই মারাত্মক ক্ষতিকর।


যেমন:-

  • দাঁত, হাড়, পেশির জটিল রোগ
  • প্রজননক্ষমতা কমায়
  • লিভারের ও কিডনির ঝুঁকি
  • মানসিক দুশ্চিন্তাসহ মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা হওয়া, হতাশা দেখা দেয়।
  • উচ্চ রক্তচাপ, ফ্যাটি লিভার কিংবা ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি।
  • ত্বকেরও মারাত্মক ক্ষতি করে।


Soft drinks

নিয়মিত কোমল পানীয় খাওয়াতে দাঁত, হাড়, পেশি ও লিভারের জটিল রোগ হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় শিশু-কিশোরদের। কোমল পানীয়তে এসপারটেম নামের এক ধরনের কৃত্রিম মিষ্টি ব্যবহার করা হয়, যা মস্তিষ্কের কোষের জন্য ক্ষতিকর। এতে রয়েছে প্রক্রিয়াজাত চিনি, যা শরীরের স্থূলতা এবং ডায়াবেটিসে বাড়াতে সহায়তা করে। যার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বেশী বেড়ে যায়। 


এছাড়া অতিরিক্ত চিনি মুখের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ভেঙে অ্যাসিড তৈরি করে, যা দাঁত ক্ষয়ের মূল কারণ। কোমল পানীয়তে রয়েছে ফসফরিক অ্যাসিড, যা হাড় থেকে ক্যালসিয়াম কেড়ে নেয়। ফলে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। এতে থাকা ক্যাফেইনও হাড়কে দুর্বল করে দেয়। উচ্চ মাত্রার ক্যাফেইন স্নায়ু উত্তেজক, যা ঘুমের সমস্যাও সৃষ্টি করে। এক ক্যান কোমল পানীয়তে এক কাপ কড়া কফির সমপরিমাণ ক্যাফেইন থাকে। যার ফলে অনেক সময় মানসিক দুশ্চিন্তাসহ মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা হওয়া, হতাশা দেখা দেওয়া সহ নানা ধরণের সমস্যা দেখা দেওয়া শুরু করে।


অধিক চাপের কার্বন-ডাই-অক্সাইড কোমল পানীয়তে বুদবুদ সৃষ্টি করে। এ দূষিত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের ফলে ফুসফুসের জটিল রোগ হওয়ার আশঙ্কা আছে। এসব কোমল পানীয় কিডনিতে পাথর তৈরি করে। যার ফলে কিডনি ভালোভাবে কাজ করতে পারে না। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, ফ্যাটি লিভার কিংবা ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি তো আছেই।


শুধু শরীরের ভেতরেই নয়, বাইরের ত্বকেরও মারাত্মক ক্ষতি করে এটি। প্রতিদিন কোমল পানীয় পান করলে ত্বকের উপরে পড়া বিরূপ প্রভাব ধূমপান করার সমান! কিছু পানীয়তে ব্রোমিনেটেড ভেজিটেবল অয়েল থাকে, যা ত্বকে র‌্যাশ সৃষ্টি করতে পারে, স্নায়ুকে অকেজো করে দিতে পারে।


এগুলোতে ফসফটেজ ও ফসফরিক এসিড থাকে, যা কোমল পানীয়কে দীর্ঘ সময় ভালো রাখে। কিন্তু তা ত্বকের উপরে খুব কম সময়ের মাঝেই বয়সের ছাপ ফেলে দেয়। নিয়মিত কোমল পানীয় পান করলে এতে থাকা এসপারটেম ও অন্যান্য কৃত্রিম চিনি বিষণ্নতার ঝুঁকিও বাড়ায়। পরিবেশের জন্যও এটি ক্ষতিকারক। 

শুধু শরীরের ভেতরেই নয়, বাইরের ত্বকেরও মারাত্মক ক্ষতি করে কোমল পানীয়।

সমস্যাটি আমাদের সরাসরি প্রভাবিত না করলেও, ছোটখাট অবহেলার কারণেই বড় সমস্যার সৃষ্টি হয়। কার্বোনেইটেড পানীয় তৈরিতে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়, এ থেকে সৃষ্ট বর্জ্যও যায় পানিতেই। অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি ক্যান পুরোপুরি রিসাইকেল করা সম্ভব হয় না। আবার অ্যালুমিনিয়াম সংগ্রমের প্রক্রিয়াও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। আর যেখানে সেখানে কোমল পানীয়ের বোতল, ক্যান ফেলার প্রবনতা তো আছেই।


এতো সব ঝুঁকির পরও বিশ্বজুড়ে এর জনপ্রিয়তা দিনে দিনে ব্যাপকতা লাভ করছে। আজকাল কোম্পানিগুলোও বিভিন্ন রঙে তৈরি করছে বিভিন্ন পানীয়। কিন্তু না জেনে কোমল পানীয় পান করে আমরা নিজেদের কতো বড় সর্বনাশ করছি, সে হিসাব কেউই রাখেন না।


সুতরাং শখের বশে কোমল পানীয় পান নয়, সুস্বাস্থ্যের জন্য সাধারণ পানীয়ই শ্রেয়। এর পেছনের অর্থ অপচয় না করে একই খরচে ডাবের পানি, তাজা ফলের শরবত পান করার চেষ্টা করতে হবে। এতে একদিকে যেমন স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, অন্যদিকে তেমনি নিম্নবিত্ত ডাব এবং শরবত বিক্রেতাও উপকৃত হবে।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url