নির্বাসনের দ্বীপ সেন্ট হেলেনা

ইতিহাস আর বিচিত্র প্রকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এক রহস্যময় দ্বীপ সেন্ট হেলেনা। এর আরেক নাম ‘নির্বাসনের দ্বীপ’। ১৮১৫ সালে ওয়াটারলুর যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর এ দ্বীপেই সম্রাট নেপোলিয়নকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিলো। মাত্র ৫১ বছর বয়সে ১৮২১ সালে এখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। এই দ্বীপে থাকাকালীন সময়ে তিনি বই পড়া, বাগান করা আর নিজের স্মৃতি রোমন্থন করে সময় কাটাতেন।

নির্বাসনের দ্বীপ সেন্ট হেলেনা

সেন্ট হেলেনা দ্বীপের অবস্থান

দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত একটি দ্বীপ সেন্ট হেলেনা। এটি বিশ্বের অন্যতম প্রত্যন্ত দ্বীপ। এর অবস্থান দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলের প্রায় ১,৯৫০ কিলোমিটার এবং দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলবর্তী শহর রিও ডি জেনেইরো থেকে ৪,০০০ কিলোমিটার পূর্বে। একসময় ব্রিটিশরা এখানে কয়েদিদের নির্বাসনে পাঠাত। যে কারণে একে 'নির্বাসনের দ্বীপ' ও বলা হয়।

অর্থনীতি

দ্বীপের অর্থনীতি প্রধান কিছু মাধ্যম হলো কৃষি, মৎস্য আহরণ এবং পর্যটন। দ্বীপের এক-তৃতীয়াংশেরও কম কৃষি বা বনায়নের জন্য উপযুক্ত। এখানকার প্রধান ফসল হল ভুট্টা, আলু এবং সবুজ শাকসবজি। বিশ্বের সবচেয়ে দামী কফিগুলোর একটি সেন্ট হেলেনা দ্বীপে চাষ করা হয়ে থাকে। দ্বীপের নামেই কপিটির নামকরণ করা হয়েছে। বিরল আর লোভনীয় স্বাদের এ কফির প্রতি পাউন্ডের দাম ১৪৫ ডলার!

১২২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপে প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজারের বেশি পর্যটক ভ্রমণ করে ইতিহাস, ঐতিহ্য আর মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সেন্ট হেলেনা আকৃষ্ট করছে পর্যটকদের। ইতিহাস আর বিচিত্র প্রকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সেন্ট হেলেনা। এখানে এমন উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে যা পৃথিবীর আর কোথায় পাওয়া যায় না। পর্যটকরা কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় নিয়ে আসেন দ্বীপটি পরিদর্শন করার জন্য।

সেন্ট হেলেনা দ্বীপের আবিষ্কারক

১৫০২ সালের ২১ মে পর্তুগীজ নাবিক জোয়া ডা নোভা ভারতবর্ষ থেকে স্বদেশে ফিরে যাবার পথে দ্বীপটি আবিষ্কার করেন। কাকতালীয়ভাবে রোমান সম্রাজ্ঞী সেন্ট হেলেনার জন্মদিনও ২১ এ মে। জোয়া ডা নোভা তাই দ্বীপের নামকরণ করেন সেন্ট হেলেনা।

সেন্ট হেলেনার জনসংখ্যা

পর্তুগিজরা যখন এ দ্বীপটি  আবিষ্কার করে তখন এতে খুব একটা জনবসতি ছিল না। তবে সময়ের সাথে সাথে এই সংখ্যা অনেক বেড়েছে। বর্তমানে দ্বীপটিতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মানুষ বসবাস করেন । যার মধ্যে শতকরা ৫০ জন আফ্রিকান, ২৫ জন ইউরোপিয়ান ও ২৫ জন চীনা রয়েছে। এদের বেশির ভাগই বিভিন্ন সময় পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে নির্বাসিত হওয়া নাবিক আর দাস-দাসিদের বংশধর। বিভিন্ন দেশের মানুষ একত্রে বসবাস করার কারণে সেন্ট হেলেনার দ্বীপে বিভিন্ন মিশ্র সংস্কৃতি দেখা যায়। 

সেন্ট হেলেনার রাজধানী

সেন্ট হেলেনার রাজধানীর নাম জেমস টাউন। ১৬৫৯ সালে ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী এটি প্রতিষ্ঠা করে। এ শহরটি সর্বমোট ৮টি জেলায় বিভক্ত। এই জেমস টাউনেই আছে দ্বীপের একমাত্র নৌবন্দর। পর্যটকরা এখানেই এসে নামেন।

যোগাযোগ ব্যবস্থা

দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সব সামগ্রী নৌপথে একটিমাত্র জাহাজের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়

দ্বীপটিতে যেকোনো পণ্য পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম হলো নৌপথ। দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সব সামগ্রী নৌপথে একটিমাত্র জাহাজের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়। জাহাজটির নাম ‘আর. এম. এস সেন্ট হেলেনা’। এ জাহাজকে বলা হয় দ্বীপের জীবনীশক্তি। বিশ্বের অবশিষ্ট গুটিকয়েক রয়েল মেইল শীপের মধ্যে এটি একটি। পর্যটকের পাশাপাশি মালামাল পরিবহনসহ সবকিছুই এই একটি মাত্র জাহাজের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।

দ্বীপে যা কিছু আছে

এখানে রয়েছে নিজস্ব দুটি টিভি চ্যানেল, ক্রিকেট স্টেডিয়াম এবং ক্রিকেট দল। এছাড়াও আছে রেডিও চ্যানেল, সংবাদপত্র, নিজস্ব জাহাজ, নিজস্ব একটি বোয়িং বিমান, একটি সরকারি ব্যাংক এবং নিজস্ব পুলিশ বাহিনী। বহু বছর ধরে এশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ইউরোপে জাহাজ চলাচলকারীদের যাত্রাবিরতির জন্য দ্বীপটি ব্যবহার করা হতো।

সেন্ট হেলেনা দ্বীপে যাওয়ার উপায়

দূর্গম অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় হেলেনা দ্বীপটির যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই কঠিন। সেখানে যাওয়ার প্রাথমিক উপায় হলো বিমান। এছাড়া  ইয়টে, ক্রুজ জাহাজের মাধ্যমেও যাওয়া সম্ভব। যাতায়াতের অসুবিধার কারণে পর্যটকদের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও দ্বীপটিতে খুব সহজে যেতে পারেন না।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url