দেশ পরিচিতি: সামোয়া

পরিচিতি

প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত একটি ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র হলো সামোয়া। এর অবস্থান নিউজিল্যান্ডের প্রায় ২৯০০ কিমি উত্তর-পূর্বে। দ্বীপরাজ্যটি নিউজিল্যান্ড থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে ১৯৬২ সালে। দেশটির মোট আয়তন দুই হাজার ৯৪৪ বর্গকিলোমিটার আর জনসংখ্যা প্রায় ৩ লাখের মতো। দেশটিতে ইংরেজি এবং সামোয়ান এই দুই ভাষা প্রচলিত আছে। দেশটির রাজধানীর নাম আপিয়া।

জন্মদিন নিয়ে অদ্ভুত রীতি

জন্মদিন নিয়ে এক অদ্ভুত রীতি প্রচলিত আছে দেশটিতে। সেখানে জন্মদিনকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়।এমনকি দেশটিতে জন্মদিন নিয়ে অদ্ভুত এক আইনও চালু আছে। স্ত্রীর জন্মদিন ভুলে যাওয়া রীতিমতো বেআইনি কাজের মধ্যে পড়ে! 


সামোয়া দেশ

কোনো স্বামী যদি তার স্ত্রীর জন্মদিন ভুলে যায় অথবা সময়মতো তাকে শুভেচ্ছা না জানায়, তা হলে সেই স্ত্রী তার ভুলোমনা স্বামীকে ডিভোর্স দেয়ার অধিকার পেয়ে যায়। রাষ্ট্রপক্ষ তাকে এ অধিকার দেয়। এরপর চাইলেই স্ত্রী এ কারণ দেখিয়ে স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন। তবে এ নিয়ম কেবল পুরুষদের জন্যই। কোনো স্ত্রী যদি স্বামীর জন্মদিন ভুলে যান, তাদের বেলায় আর এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে না!

সামোয়ান মানুষরা যেমন

সামোয়ান নারীদের দৈহিক সৌন্দর্যও মুগ্ধ করার মতো। কেবল নারীই নয়, এদেশের পুরুষরাও তাদের  সুন্দর দেহ গঠনের জন্য পরিচিত। সুন্দর দেহের মতো তারা সুন্দর মনেরও অধিকারী। এরা সহজেই সবার সাথে মিশতে পারে, বন্ধুত্বও পাতিয়ে নেয় খুব দ্রুত।

মজার ব্যাপার হলো সামোয়ায় ফিটফাট মানুষের চেয়ে স্থুলকায় মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। তার একমাত্র কারণ হলো অতিরিক্ত খাবার খাওয়া। সামোয়ানরা তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার ছেড়ে আমদানি করা এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। যার কারণে স্থূলতা তাদের উপর জেঁকে বসছে।

সামোয়ানদের পোশাকে পরিচ্ছদ

সামোয়ানদের পোশাকে পরিচ্ছদেও আছে বৈচিত্র্যতা। বেশি বড় ধরনের পোশাক সামোয়ানদের পছন্দ নয়। 

রং তারা খাটো পোশাকেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। সে কারণেই সামোয়ান নারীদের মধ্যে অনেকেরই বিকিনির প্রতি বেশ ঝোঁক দেখা যায়। এদের পোশাকে উল্কির মতো এক জাতীয় নকশা দেখা যায়। এ উল্কি সামোয়ানদের অনেক পুরোনো ঐতিহ্য। সাদা-কালো রঙে এ নকশা ফুটে ওঠে। 

প্রাচীন সামোয়ান সমাজে উল্কির কদর ছিল সবচেয়ে বেশি। তখনকার ১৪-১৮ বছর বয়সে পুরুষদের গায়ে উল্কি আঁকাকে ফ্যাশন হিসেবে মনে করা হতো। তবে বর্তমানে এর প্রচলন কিছুটা কমে গেছে


সেনাবাহিনী নেই

পৃথিবীর যেসব দেশে কোনো সামরিক বাহিনী নেই, তাদের মধ্যে সামোয়া অন্যতম। এদের নিজস্ব কোনো সেনাবহিনী ও পুলিশ বাহিনী নেই। তবেও তারা তাদের বিশেষ বাহিনী দ্বারা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকে। এছাড়া দেশটি ১৯৬২ সালে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে একটি চুক্তি করে। যেখানে বলা আছে, সামোয়ায় যদি কোনো যুদ্ধ বা বাইরের দেশের আক্রমণের মতো ঘটনা ঘটে- তবে নিউজিল্যান্ডের সাহায্য নেবে।

সংস্কৃতি

নাচ গানেও সামোয়ানরা বেশ দক্ষ। আধুনিক পপ ও রক গান এরা পছন্দ করে। এসব গানের অনেক দেশীয় ব্যান্ড দল রয়েছে সেখানে। এদের সঙ্গীতের নাম 'হাকা'। দেশীয় সঙ্গীতে এরা একধরনের ঢোল ও ঢোলজাতীয় বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে। নাচেও এগুলো ব্যবহার করা হয়। নাচের তালে তালে তারা সবসময় হাততালি দেয়। এটি তাদের বিশেষ বাজনা হিসেবে মনে করা হয়।

দেশটির ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ  খ্রিষ্ট ধর্ম পালন করে। সামোয়াতে মুসলমানের সংখ্যা তিন শতাধিক। এছাড়া হিন্দু, ইহুদি ও বাহাই ধর্মের অনুসারীও আছে। সব ধর্মই শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের সুযোগ পায়।

বলা যায়, দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বন্ধুভাবাপন্ন মানুষ সব মিলিয়ে এটিকে করে তুলেছে একটি শান্তির দেশ। যে কারণে পর্যটকদের কাছে এটি একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url