দেশ পরিচিতি: স্লোভাকিয়া

মধ্য ইউরোপের স্থলবেষ্টিত একটি দেশ স্লোভাকিয়া, যার অফিসিয়াল নাম হচ্ছে স্লোভাক রিপাবলিক। ১৯৯৩ সালে চেকোস্লোভাকিয়া ভেঙে যে দুটি দেশ গঠিত হয় সেগুলোর মধ্যে একটি স্লোভাকিয়া। দেশটির মোট আয়তন ৪৯ হাজার ৩৫ কিলোমিটার।

স্লোভাকিয়া

দূর্গ ও গুহার দেশ

আয়তনে খুব ছোট্ট হলেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য লীলাভূমি এটি। দেশটির সর্বত্র ছড়িয়ে আছে পাহাড়, সুরক্ষিত দুর্গ ও অসংখ্য গুহা। ইউরোপের সবচেয়ে বেশি গুহার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে স্লোভাকিয়ায়। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ২ হাজার ৪০০–এর মতো গুহা আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩০টির মতো গুহা সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত। কিছু কিছু গুহা ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।

বিশ্বের উন্নত এবং আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার এ দেশে পাহাড়, বিভিন্ন দুর্গ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিবছর সারা পৃথিবী থেকে অসংখ্য পর্যটক বেড়াতে আসেন। স্লোভাকিয়ার গুহাগুলোর সৌন্দর্য এতটাই বেশি যে, এগুলোর ভেতরের অংশকে কেউ কেউ পৃথিবীর স্বর্গও বলে থাকেন। ভ্রমণ পিপাসু এবং এডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের কাছে এই ধরনের গুহা ভীষণ পছন্দের জায়গা।

স্লোভাকিয়ায় প্রায় ২০০ টির মতো দুর্গও রয়েছে। স্বল্প আয়তনের দেশে এতো বেশি দুর্গ পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না। যে কারণে এগুলো দেখার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা ভিড় জমান। স্লোভাকিয়ার বিখ্যাত দূর্গগুলোর মধ্যে ব্রাটিস্লাভা, ডেভিন, স্পিস এবং ওরাভা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

স্লোভাকিয়ার রাজধানী

দেশটির রাজধানী ও বৃহত্তম শহরের নাম ব্রাটিস্লাভা। এটি হাঙ্গেরি ও অস্ট্রিয়ার সীমানায় অবস্থিত। বিখ্যাত দানিয়ুব নদীর তীরে অবস্থিত এ শহরটি পৃথিবীর একমাত্র রাজধানী শহর, যা ভিন্ন দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সঙ্গে সীমানা ভাগাভাগি করেছে।

ব্রাটিস্লাভা

ব্রাতিস্লাভায় ঢোকার মুখেই পাহাড়ের উপরের চতুর্ভুজাকার ঝকঝকে সাদা প্রাসাদ নজর কেড়ে নেয়। চার স্তম্ভ যুক্ত বিশাল এই রাজপ্রাসাদটি হলো স্লোভাকিয়ার ন্যাশনাল মিউজিয়াম। হাঙ্গেরির রাজমুকুট সহ স্লোভাকিয়ার সমস্ত অমূল্য ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন এই প্রাসাদে সুরক্ষিত আছে।

ব্রাতিস্লাভা দুর্গ

নবম শতাব্দীতে নির্মিত ব্রাতিস্লাভা দুর্গও এই শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান। স্লোভাকিয়ার আরো একটি দৃষ্টিনন্দন প্রাসাদ হলো বজনিক। বজনিক শহরে একটি পাহাড়ের উপর এটি নির্মিত হয়েছে। ১৯৭০ সালে একে জাতীয় ও সাংস্কৃতিক স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে ঘোষণা করে দেশটির সরকার। প্রথমদিকে এ দুর্গটি কাঠ দিয়ে তৈরি হয়েছিল। পরবর্তীতে আবার পাথর দিয়ে পুন:নির্মাণ করা হয়। অনেকগুলো বিখ্যাত সিনেমার শুটিং হয়েছে এই রাজপ্রাসাদে।

স্টারি স্মোকোহভেক শহর

স্টারি স্মোকোহভেক শহরটি স্কিয়িং এবং হাইকিং-এর জন্য বিশেষ পরিচিত। টাট্রা পর্বতমালায় ঘেরা এ শহরটি থেকে পর্বতের অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়। পাহাড়ের চূড়ায় আরোহণ করতে সাধারণত চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা সময় লাগে। শীতকালে সম্পূর্ণ বরফাচ্ছাদিত স্টারি স্মোকোহভেক ভ্রমণের জন্য বেশ আকর্ষণীয় হয়ে থাকে।

ওভারা দূর্গ

স্লোভাকিয়ায় গেলে ঘুরে আসতে পারেন পাহাড়ের চূড়ায় সুরক্ষিত ওরাভা দুর্গ থেকে। ত্রয়োদশ শতকে নির্মিত এ দূর্গ থেকে আশপাশের অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখা যায়। ওরাভা নদীর পাশে অবস্থিত হওয়ায় দুর্গটির নামকরণ করা হয় ওরাভা দুর্গ।

স্লোভ্যাক প্যারাডাইস ন্যাশনাল পার্ক

স্লোভাকিয়ার অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান হলো স্লোভ্যাক প্যারাডাইস ন্যাশনাল পার্ক। এই পার্ক দর্শনার্থীদের কাছে অনেক পছন্দের। এই শহরে রয়েছে নদী ও উপত্যকা। নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন উপত্যকা।

যানবাহন নিয়ে দারুণ রীতি

দেশটিতে যানবাহন নিয়ে একটি সুবিধা রয়েছে জনগনের জন্য। আর তা হলো ইউরোপের ভিতর স্লোভাকিয়া একমাত্র দেশ যেখানে ছাত্র, সিনিয়র সিটিজেন এবং শিশুরা বিনামূল্যে ট্রেনে চলা ফেরা করতে পারে। ২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে দেশটিতে এমন নিয়ম চালু করা হয়েছে। এ সুবিধা ২৬ বছর পর্যন্ত সকল ছাত্রছাত্রী, বিধবা নারী, শারীরিক কিংবা মানসিকভাবে অক্ষম ব্যক্তি এবং ৬২ বছরের অধিক বয়স্ক মানুষের জন্য প্রযোজ্য। মজার ব্যাপার হলো, কেবল স্লোভাকিয়ানরাই নয়, বরং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিটি সদস্য দেশের জনগণ এ নীতির আওতাভুক্ত।

স্লোভাকিয়ার ধর্ম

স্লোভাকিয়ার জনসংখ্যার বেশিরভাগই খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী। ২০২১ সালের আদমশুমারির রিপোর্ট অনুসারে, দেশটির শতকরা ৬৪.৮ ভাগ মানুষ খ্রিস্টান ধর্মের অনুসরী, যাদের মধ্যে ৬৯.৮ ভাগ ছিল ক্যাথলিক। এছাড়া অন্যান্য ধর্মের লোকেরও বসবাস আছে দেশটিতে। সব ধর্মের মানুষই পরষ্পরের প্রতি সম্মান বজায় রেখে বসবাস করে থাকে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url