দেশ পরিচিতি: তুর্কমেনিস্তান

পরিচিতি

ধ্য এশিয়ার দেশ তুর্কমেনিস্তান। ইসলাম প্রধান এই দেশটি সোভিয়েত ইউনিয়নের থেকে স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৯১ সালে। তুর্কমেনিস্তানের আয়তন ৪৯১২১০ বর্গকিলোমিটার। এর অধিকাংশ এলাকা বালুকাময় মরুভূমি, যার মধ্যে স্থলে স্থলে বালিয়াড়ি দেখতে পাওয়া যায়। তুর্কমেনিস্তানের ৮০ শতাংশ জুড়ে রয়েছে কারাকুম মরুভূমি।

মধ্য এশিয়ার সবচেয়ে কম জনসংখ্যার দেশ তুর্কমেনিস্তান। জাতিগত গ্রুপের মধ্যে রয়েছে শতকরা ৮৫ ভাগ তুর্কমেন, উজবেক ৫ ভাগ, রুশ ৪ ভাগ এবং অন্যান্য ৬ ভাগ। প্রধান ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে রয়েছে মুসলিম ৮৯ শতাংশ, খ্রিষ্টান ৯ শতাংশ এবং অন্যান্য ২ শতাংশ।

তুর্কমেনিস্তানের ভাষা

দেশটিতে দুটি ভাষা প্রচলিত আছে। এটি হলো তুর্কমেন ভাষা এবং অন্যটি রূশ ভাষা। দুটোই সেখানকাে সরকারি ভাষা। যার মধ্যে তুর্কমেন ভাষায় জনগণের প্রায় ৮০% এবং রুশ ভাষায় প্রায় ৮% কথা বলে। এছাড়া প্রচলিত অন্যান্য ভাষার মধ্যে আছে বেলুচি ভাষা ও উজবেক ভাষা।

প্রাকৃতিক সম্পদের দেশ তুর্কমেনিস্তান

তুর্কমেনিস্তানকে বলা হয় প্রাকৃতিক সম্পদের দেশ। দেশটি প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেলে সমৃদ্ধ। এখানে প্রাকৃতিক গ্যাসের চতুর্থ বৃহত্তম মজুদ আছে।

দেশটির জনগণ কে প্রত্যেক মাসে বিনামূল্যে পানি, বিদ্যুৎ আর গাড়ি চালানোর জন্য পেট্রোল সরবরাহ করে সরকার। ১৯৯৩ সাল থেকে দেশটির জনগণ এ সুবিধা ভোগ করছে।

তুর্কমেনিস্তান সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য

সাদা শহরের দেশ তুর্কমেনিস্তান

তুর্কমেনিস্তানের সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো এর রাজধানী আশগাবাত। যা আজ সারা বিশ্বের কাছে সাদা শহর হিসেবেই পরিচিত। 

তুর্কমেনীয় সরকার বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে শুধুমাত্র এই শহরটিকে সাদা নগরীতে পরিণত করতে গিয়ে। শহরের প্রায় প্রত্যেকটি বাড়ি আর সরকারি ভবনগুলো সাদা রঙের মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

সাদার সৌন্দর্য পুরোপুরি ফুটিয়ে তোলার জন্য তুর্কমেনিস্তানের রাস্তায় অন্য রঙের গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী এবং উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তারাও সাদা গাড়ি ব্যবহার করেন।

এমনকি দেশটির রাজধানীতে নির্মিত ভাস্কর্য গুলোও তৈরি করা হয়েছে সাদা মার্বেল পাথরের কারুকার্যে। শহরটিকে এক নজর দেখলে মনে হবে যেন রূপকথার কোনো শ্বেত নগরী। 

পরিচ্ছন্ন নগরী

মার্বেল পাথর দিয়ে শহর বানিয়েই ক্ষান্ত হয়ে যায়নি তুর্কমেনরা। শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে রীতিমতো আইন আছে সেখানে। 

জনসম্মুখে ধূমপান সেখানে নিষিদ্ধ। কেউ জনসম্মুখে ধূমপান করে তাহলে সে দেশের নিয়ম অনুযায়ী তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। ময়লার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা ছাড়া অন্য কোথাও ময়লা ফেলাও এখানে অপরাধ। ফেললে শাস্তি হিসেবে গুনতে হয় মোটা অঙ্কের জরিমানা।

শুভ্র এ নগরীটি দেখতে প্রতি বছর সারা পৃথিবী থেকে লাখ লাখ দর্শনার্থী আসেন। শহরজুড়ো সাদা দালানকোঠা আর রাস্তাঘাট দেখে মুগ্ধ হন তারা।

তুর্কমেনিস্তানের নরকের দরজা

পর্যটকদের জন্য তুর্কমেনিস্তানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিস হল দারভাজা গ্যাস চেম্বার। যা সবার কাছে নরকের দরজা হিসেবেই বেশি পরিচিত। দেশটির কারাকুম মরুভূমির মাঝখানে অবস্থিত এ গ্যাস চেম্বারটি প্রায় ৫০ বছর ধরে জ্বলছে। প্রতিবছর বহু পর্যটক এই আগ্নেয়গিরি দেখতে আসে। 

এটি মূলত একটি প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র। দীর্ঘদিন ধরে অগ্নিমুখটি অনবরত জ্বলছে বলে একে 'নরকের দরজা' বলা হয়। ভূ-তত্ববিদগন মিথেন গ্যাসের বিস্তার প্রতিরোধ করার জন্য জ্বালামুখটিতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলেন। যেটি ১৯৭১ সাল থেকে ক্রমাগত জ্বলছে। এ আগুনের শেষ কোথায় তা কেউ জানে না।

অন্ধকারের রাতেও বহুদূর থেকে দেখা যায় আগুনের এ লেলিহান শিখা। রাতের অন্ধকারে সে দৃশ্য এক অপরূপ সৌন্দর্য্য সৃষ্টি করে!

ঐতিহ্যবাহী কার্পেট বুনন

সুন্দর কার্পেট তৈরি করার জন্যও বেশ পরিচিত তুর্কমেনিস্তান। দেশটির প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে বছর ধরে চলে ফুল নকশার বাহারি কার্পেট বুনন। এসব কার্পেট বিক্রি হয় ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায়। বহু শতাব্দী ধরে তুর্কমেনরা ধরে রেখেছে তাদের এ ঐতিহ্য।

বিয়ে নিয়ে মজার আইন

সবশেষে দেশটির একটি মজার ব্যাপার জানিয়ে দেই। আর তা হলো অন্য কোনো দেশের নাগরিক যদি একজন তুর্কমেন নারীকে বিয়ে করতে চায়, তাহলে সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। আর সেজন্য তাকে ৫০,০০০ ডলার ফি দিতে হয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url