বিয়ের জন্য বউ খুঁজতে জঙ্গলে!
ভারতের মুৃথুভান সম্প্রদায়ের মধ্যে বিয়ে নিয়ে এক অদ্ভুত রীতি প্রচলিত ছিল। সেখানকার নিয়ম অনুযায়ী বিয়ে করতে হলে জঙ্গল ঘেঁটে বউ খুঁজে নিয়ে আসতে হতো হবু বরকে। জঙ্গলে কনে খুঁজে পেলে সেখানেই তাদের বিয়ে দেয়া হতো। আর না পেলে তাকে সারা জীবন অবিবাহিতই থাকতে হতো।
প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলত একেকটি বিয়ের উৎসব। তখনকার মুথুভান সম্প্রদায়ের এ বিয়ের রীতি সারা গ্রামের লোকজন উপভোগ করত। বর কনের পরিবারের মধ্যে যখন বিয়ের কথাবার্তা পাকাপাকি হয়ে যেতো, তখন হবু কনের বন্ধুরা কনের মা-বাবার অনুমতি নিয়ে তাকে জঙ্গলের মাঝে লুকিয়ে রাখতো।
কনে নববধূর বেশেই বন্ধুদের সঙ্গে রওনা দিতো গভীর জঙ্গলের উদ্দেশ্য। বন্ধুরা তাঁর জন্য তৈরি করা ঘরে তাঁকে ঢুকিয়ে দিত। যতক্ষণ না বর তাঁকে নিতে আসতো ততক্ষণ পর্যন্ত ওই ঘরেই দিন কাটাতে হত মেয়েটিকে। কনের বন্ধুরা সেখানে তার খেয়াল রাখতো। কনের যেন কোনো ধরনের কোনো ক্ষতি না হয় সে ব্যাপারে তারা সবসময়ই সজাগ থাকতো।
অন্যদিকে বউ খুঁজে আনার জন্য জঙ্গলে রওনা হত পাত্র ও তার বন্ধুরা। হবু বউকে খুঁজে এনে নিজের সাহসিকতার প্রমাণ দিতে হয় বরকে। সারা জঙ্গলে খোঁজ করতে শুরু করতো তারা। কিন্তু খুঁজে পাওয়া খুব একটা সহজও ছিলো না। হবু কনেকে খুঁজে পেতে অনেকেরই দিনের পর দিন জঙ্গলের মাঝেই কাটিয়ে দিতে হতো। এমনকি নানা রকম বিপদের মুখোমুখিও হতে হত তাদের। কিন্তু ভয়ে পালিয়ে আসার সুযোগ ছিলো না। আর থাকলেও তা কেউ করতো না। কারণ কনেকে খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হলে মান-সস্মান নষ্ট হয়ে যাবে।
হবু বর যদি কনেকে খুঁজে বের করতে না পারতো তা হলে তাকে ব্যর্থ হিসেবে ধরে নিতেন গ্রামবাসী। এমনকী, সারাজীবন আর বিয়ে করার সুযোগ মেলে না তার। তাই জীবন বাজি রেখে হলেও হবু বর হবু কনেকে খুঁজে বের করতো।
তবে হবু কনের জন্য সে রীতি ভিন্ন। তাকে অবিবাহিত থাকতে হতো না। বরঙ তার জন্য নতুন করে অন্য পাত্রের খোঁজ শুরু হত। যে দিন বর তার হবু কনেকে খুঁজে পেতো সেদিনই তাদের বিয়ে দেওয়া হতো। জঙ্গলের মধ্যেই সে বিয়ের ব্যবস্থা করা হতো। বিয়ের সবকিছু জোগাড় করতো সঙ্গে থাকা বন্ধু বান্ধবীরাই।
এখানেই শেষ নয়, এরপর তাদের সেই জঙ্গলেই একসঙ্গে এক রাত কাটাতে হতো। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো একরাত থাকার জন্য নবদম্পতিকে গাছের উপর ঘর বেঁধে দেওয়া হতো। পর দিন সকালে নবদম্পতিকে নিয়ে গ্রামে ফিরে আসতো তারা। পুরো গ্রামের মানুষজন তখন মেতে উঠতো আনন্দ উৎসবে।
ভারতে কেরালায় এই আদিবাসী মুথুভান সম্প্রদায় এখনো আছে। তবে এক সময় তাদের বিয়েতে এমন রীতি থাকলেও এখন তা ক্রমশ হারিয়ে গেছে। আধুনিকতার কারণে জঙ্গলের পরিমাণ কমে গেছে অনেকটাই। কনেকে লুকিয়ে রাখার মতো গভীর জঙ্গল এখন খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায় না। বসবাসের জন্য মানুষ জন্য জঙ্গল কেটে বাড়িঘর তৈরি করছে। যার কারণে এ প্রথাও বিলুপ্তির পথে।
‘মুথুভান কল্যাণম’ নামে একটি সিনেমাও মুক্তি পেয়েছে কেরালায়। সেখানে মুথুভান সম্প্রদায়ের হারিয়ে যেতে বসা বিচিত্র এই বিয়ের প্রথা তুলে ধরা হয়েছে।