দেশ পরিচিতি: আলজেরিয়া
পৃথিবীর বুকে অনিন্দ্যসুন্দর এক দেশ আলজেরিয়া। এটি আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অংশে, ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত। আলজেরিয়া আয়তন প্রায় ২৩ লক্ষ ৮১ হাজার ৭৪১ বর্গ কিলোমিটার। আয়তনের বিচারে এটি আফ্রিকা মহাদেশের বৃহত্তম ও বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম রাষ্ট্র। আরবের সাথে ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা ও ধর্মের মিল থাকার কারণে আলজেরিয়াকে আরব বিশ্বের অংশ হিসেবে ধরা হয়।
দেশটির বৃহত্তম শহর ও রাজধানীর নাম হলো আলজিয়ার্স। এ শহরটিতে রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা। যেগুলোর সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিবছর হাজার হাজার দর্শনার্থী আসে দেশটিতে।
আফ্রিকার সবচেয়ে বড় কারুকার্যময় মসজিদের অবস্থানও আলজেরিয়ায়। যার নাম “দ্য গ্রেট মস্ক অব আলজিয়ার্স”। আয়তনের হিসেবে এ মসজিদটি বর্তমানে আফ্রিকা মহাদেশের সর্ববৃহৎ ও, বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মসজিদ হিসেবে স্বীকৃত। দীর্ঘ ৭ বছর ধরে এই অনিন্দ্যসুন্দর মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এতে ব্যয় হয়েছিলো প্রায় ১০০ কোটি ডলার।
বিশালাকার এই মসজিদে এক সাথে প্রায় ১২ লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। তাছাড়া মসজিদের অভ্যন্তরে আছে ১০ লক্ষেরও বেশি বই সমৃদ্ধ একটি গ্রন্থাগার। যাতে দুই হাজারের বেশি পাঠক, এক সঙ্গে বসে বই পড়তে পারবে। এছাড়া মসজিদটির যে ভূগর্ভস্থ পার্কিং রয়েছে সেখানে সাত হাজার গাড়ি রাখার ব্যবস্থা আছে।
“দ্য গ্রেট মস্ক অব আলজিয়ার্স” মসজিদের আরো একটি বৈশিষ্ট্য হলো এর মিনারটি। এটি আফ্রিকার সবচেয়ে উঁচু মিনার হিসেবে পরিচিত। চার লাখ স্কয়ার মিটার এলাকার ওপর নির্মিত এই মসজিদের মিনারটি ৮৭০ ফুট উঁচু।
আলজেরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হলো “ওরান”। এটি বন্দর শহর হিসেবেই বেশি পরিচিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যবেষ্টিত ওরান শহরের আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দু এর ঐতিহাসিক ভবন।
আলজেরিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর “কনস্টান্ টাইন”। এই শহরকে ‘দ্য সিটি অব ব্রিজেস’ বলা হয়ে থাকে। এটি একটি পুরানো শহর, যা তার অস্বাভাবিক স্থাপত্য এবং সরু রাস্তার জন্য বিখ্যাত। শহরটিকে ঘিরে রেখেছে রোমেল নদীর উপকূলীয় সৌন্দর্য। শহরের দুই অংশের সংযোগস্থলে রয়েছে অনন্য সুন্দর সেতু। বেশ কয়েকটি সুউচ্চ পাহাড় ও চিত্তাকর্ষক উপত্যকায় ঘেরা আছে পুরো শহর। এর হৃদয় কাড়া দৃশ্যাবলি যে কোনো দর্শনার্থীকেই মুগ্ধ করবে।
আলজেরিয়ার আধুনিক শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো টামানরাসেট। এই শহরটির চারদিকে ছড়িয়ে আছে হাজারো দোকান, রেস্তোরাঁ আর ব্যাংক। ভোজনবিলাসী মানুষদের ভ্রমনের জন্য শহরটি একেবারে উপযুক্ত। শহরের পাশেই রয়েছে আহাগার ন্যাশনাল পার্ক। চাইলে সেখানেও সময় কাটাতে পারেন ভ্রমণকারীরা।
আলজেরিয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান সাহারা অঞ্চল। আফ্রিকা মহাদেশে অ্যাডভেঞ্চার করতে আসা পর্যটকদের এই অঞ্চলে বেশি ভ্রমণ করতে দেখা যায়। সাহারা মরুভূমির পাশে ঘার্দাইয়া শহর অবস্থিত। আফ্রিকা মহাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত ও পুরনো শহর ঘার্দাইয়া। শহরটির মনোমুগ্ধকর দৃশ্যে বিমোহিত হন সব বয়সের মানুষ।
আলজেরিয়ায় পুরুষের চেয়ে নারীদের প্রাধান্যই বেশি। অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রেও এখানে নারীরাই এগিয়ে আছে। দেশটির প্রচলিত নিয়ম হলো স্বামীরা স্ত্রী ও সন্তানের ভরণপোষণের খরচ দেবে। আর স্ত্রীর উপার্জন তাঁর নিজের জন্য থাকবে। কিন্তু অনেক নারীকেই তাঁর বেতন তুলে দিতে হয় স্বামীর হাতে। উপার্জনের ওপর তাদের নিজের অধিকার নেই। এ বিষয়ে দেশটিতে আইনও আছে।
অনেক সময় বেতনের অর্থ নিয়ে তাঁদের ব্ল্যাকমেইলও করা হয়। নিজের বেতনের ওপর কোনো স্ত্রী যদি তার স্বামীকে হস্তক্ষেপ করতে বাধা দেয় তাহলে সে স্ত্রীকে ঘরে থাকতে বাধ্য করা হয়। শুধু স্বামীরাই যে বেতনের ওপর হস্তক্ষেপ করেন এমনটা নয়, পরিবারের বাবা বা ভাইয়েরা বাড়ির মেয়েদের আয়ের অর্থ নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন।
অতিথি আপ্যায়নেও আলজেরিয়ায় রয়েছে ভিন্নতা। দেশটিতে কেউ যখন কারো বাড়িতে বেড়াতে যায় তখন খাওয়া শেষে প্লেটে অতিরিক্ত খাবার রেখে দেয়া হয়। এতে করে বোঝানো হয় আপ্যায়নকারীরা- অতিথিকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পরিমান খাবার দিতে সক্ষম হয়েছেন। এছাড়াও কোনো বাড়িতে অতিথি এলে গৃহকর্তা প্রথমেই তাদের ছোট বাচ্চাদের খেজুর এবং দুধ দিয়ে থাকেন। এটাকে তারা অভ্যর্থনা বলে মনে করে।