জেব্রা ফিঞ্চ
পৃথিবীতে পাখির অসংখ্য প্রজাতি আছে, যার মধ্যে পোষা প্রাণী হিসাবে অন্যতম জনপ্রিয় একটি হল জেব্রা ফিঞ্চ। আজকে আমরা আলোচনা করবো এ সুন্দর পাখিটিকে নিয়ে। যারা জেব্রা ফিঞ্চ পালনে আগ্রহী তারা দয়া করে মনোযোগ সহকারে পুরো আর্টিকেলটি পড়বেন। আশা করি উপকৃত হবেন।
বাসস্থান
উত্তর ও দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ায় জেব্রা ফিঞ্চ পাখির দেখা পাওয়া যায় বেশি। ঠাণ্ডা ও আদ্র আবহাওয়া থেকে দূরে থাকে এই পাখি। সাধারণত একই স্থানে অনেকগুলো জেব্রা ফিঞ্চ বাসা বাঁধে। এরা বিশ্রাম করা ও প্রজননের ভিন্ন ভিন্ন বাসা তৈরি করে।
গড় আয়ু
জেব্রা ফিঞ্চ সাধারণত ৫ থেকে ৯ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। তবে এর ব্যতিক্রমও দেখা যায় কখনো কখনো। ১২ বছর কিংবা তারও বেশি সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকার উদাহরণ আছে।
দৈহিক গঠন
পুরুষ ও নারী জেব্রা ফিঞ্চের আকারে খুব একটা পার্থক্য নেই। অনেকটা একই রকম দেখতে এরা। তবে পরিপক্ব বয়সে পৌঁছালে পুরুষ ও নারী সহজেই আলাদা করা যায়। কারণ পুরুষ পাখিদের উজ্জ্বল কমলা পালক থাকে। জেব্রা ফিঞ্চ লম্বায় এরা ৩.৫ থেকে ৪ ইঞ্চি হয়ে থাকে আর ওজনে সাধারণত ১২-১৬ গ্রাম হয়ে থাকে। এদের ঠোঁট এবং পা টুকটুকে লাল বা কমলা রং এর।
জেব্রা ফিঞ্চের জাত
পৃথিবীতে জুুড়ে জেব্রা ফিঞ্চের বেশ কিছু জাত আছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু জাত হলো গ্রে, ফন, হোয়াইট, পাইড, ক্রেস্টেড, ব্লাক চিক, চেস্টনাট ফ্লাঙ্কড হোয়াইট, ইজাবেল বা ফ্লোরিডা ফেন্সি, সিলভার ইত্যাদি।
খাবার-দাবার
জেব্রা ফিঞ্চের সবচেয়ে প্রিয় খাবারের নাম হলো মিলেট। খাঁচায় এদের প্রধান খাবার হিসেবে অনেকেই কাউন দিয়ে থাকেন, এটাও এক ধরণের মিলেটই বলা যায়। তবে কাউনের পাশাপাশি চীনা, তিশি, গুজিতিল, ক্যানারি, পোলাও ধান ইত্যাদিও দেওয়া যায়। এছাড়া সপ্তাহে তিন থেকে চার বার পালং, সরিষা, কলমি, পুই, লাল ইত্যাদি শাক, ধনেপাতা, নিমপাতা, সজনে পাতা দেওয়া উচিৎ। ডিমের খোসা ধুয়ে শুকিয়ে গুড়া করেও খাবার হিসেবে দেওয়া যায়।
এছাড়া পাখির সুস্থতার জন্য সপ্তাহে এক থেকে দুই বার এসিভি, ঘৃতকুমারির দ্রবণ, তুলসি দ্রবণ খাওয়ানো যায়। এতে করে পাখির অসুখ-বিসুখ কম হবে।
ফিঞ্চ পাখির প্রজনন
আচার আচরণ এবং হরমোন
জেব্রা ফিঞ্চের সঙ্গে মানুষ অনেক আচরণের মিল রয়েছে। তারা বিয়ের জন্য আগে পাত্রীর সঙ্গে দেখা করে। এমনকি সন্তান পালনে কে কি দায়িত্ব নিতে পারবে তা আলোচনা করে। তবে সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এরা গুরুত্ব দেয় সৌন্দর্যের উপর। এক্ষেত্রে নারী জেব্রা ফিঞ্চ পাখির একটা স্বভাব বেশ অদ্ভুত। যে পুরুষ পাখিটি দেখতে সবচেয়ে বেশি ভালো তাকেই তারা জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিতে চায়।
যদি তাদের সঙ্গী দেখতে খারাপ হয় বা সঙ্গীকে পছন্দ না হয়,তাহলে রহস্যময় এক বড় ডিম দেয় পাখিটি। তবে দেখতে কুৎসিত বলেই যে নিজের সঙ্গীকে ছেড়ে চলে যায় এমনটাও নয়। বরং সারা জীবন একজন সঙ্গীকে নিয়েই কাটিয়ে দেয়।
বড় ডিম দেওয়ার ক্ষেত্রে নারী জেব্রা ফিঞ্চের ডিমগুলোতে টেস্টোস্টেরন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি রাখে। শুধু নিজের সন্তানের কথা ভেবেই এমনটা করে থাকে তারা। কারণ সে চায় না তার ছানাগুলোও দেখতে খারাপ হোক। আর এ কারণেই নারী জেব্রা ফিঞ্চ অতিরিক্ত ডিম্বাশয় এবং ভিটামিন দিয়ে তুলনামূলকভাবে বড় ডিম দেয়, যাতে বাবার শরীরের ঘাটতিগুলো পূরণ করে ছানাগুলো দেখতে সুন্দর হয়।
গবেষকরা মনে করেন, এতে জেব্রা ফিঞ্চের বাচ্চাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে এবং মায়ের জিনগুলো তার মধ্যে বেশি প্রভাব বিস্তার করে। তবে সব সময়ই যে নারী পাখিদের বড় দেওয়ার উদ্দেশ্য সফল হয় তা নয়, বরং কিছু সময় ফলাফল হিতে বিপরীতও হয়।
গানের পাখি ফিঞ্চ
মানুষের সাথে এ পাখির আরেকটি মিল রয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা নারীরা যেমন অনাগত সন্তানের সঙ্গে কথা বলেন, এ জাতের পাখিরাও অনেকটা সেভাবে ছানা বেরোনোর আগেই নিজেদের ডিমকে গান শোনায়। অস্ট্রেলিয়ার একদল গবেষক ৬১টি ‘জেব্রা ফিঞ্চ'কে প্রায় দু'বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করে এ তথ্য আবিষ্কার করেছেন।
তারা দেখেন যে, এরা কিচিরমিচির গান শুনিয়ে নিজের অনাগত সন্তানদের সতর্কবার্তা দেয় বাইরের উষ্ণতা সম্পর্কে। মা পাখির এ গান তাদের বিকাশের প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটায়। দেখা যায়, যেসব ডিমকে ওই গান শোনানো হয়েছিল, সেগুলো ফুটতে তুলনামূলক দেরি হয়েছে।
আর ছানাগুলোও হয়েছে কিছুটা ছোট ছোট। এই আকৃতি তাদের টিকে থাকার সহায়ক। কারণ, উষ্ণ পরিবেশে ছোট্ট শরীর তুলনামূলকভাবে সহজে শীতল হয়। আর এভাবেই মা পাখি তার সন্তনকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচতে সাহায্য করে।