যে সব দেশের নিজস্ব কোন সামরিক বাহিনী নেই

কোন একটি দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার রক্ষা করার দায়িত্বে থাকে পুলিশ এবং বাইরের শত্রুর হাত থেকে দেশ, দেশবাসীকে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব দেশটির সেনাবাহিনীর। এছাড়াও সেনাবাহিনীর একটি বড় অংশে দেশের সীমানায় পাহারা দেওয়ার দায়িত্বে থাকে।মূলত পুলিশ ও সেনাবাহিনী একটি সম্পূর্ণ দেশের এবং দেশবাসীর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে। সেনাবাহিনী ছাড়া কোন দেশের নিরাপত্তার কথা যেন কল্পনাই করা যায় না। কিন্তু শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি, বিশ্বের এমন কিছু দেশ রয়েছে, যাদের নিজস্ব কোন সেনাবাহিনী, এমনকি সীমান্তেও কোনো সেনাবাহিনী নেই। আজকের প্রতিবেদনে জানাবো এমনই ৬টি দেশ এবং তারা কীভাবে দেশের নিরাপত্তা রক্ষা করে সে সম্পর্কে।

পৃথিবীর যেসব দেশে কোনো সেনাবাহিনী নেই।

সূচিপত্র:-

  • মরিশাস
  • কোস্টারিকা
  • আইসল্যান্ড
  • লিশটেনস্টাইন
  • গ্রেনাডা
  • অ্যান্ডোরা
  • সামোয়া

মরিশাস

মরিশাস হলো ভারত মহাসাগরের একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। প্রায় সাড়ে দশ লক্ষেরও কম জনসংখ্যা নিয়ে গড়ে উঠেছে দেশটি। মরিশাস নামের এই ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্রটির নিজস্ব এবং নিয়মিত সশস্ত্র কোনও সেনাবাহিনী নেই। তবে তাদের পুলিশ বাহিনী রয়েছে। প্রায় দশ হাজার জন পুলিশকর্মী দেশের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক উভয় ধরনের নিরাপত্তা পরিচালনা করে থাকেন। এছাড়াও রয়েছে একটি আধাসামরিক ইউনিট। আধাসামরিক ইউনিটটির পোশাকী নাম স্পেশাল মোবাইল ফোর্স। যুক্তরাজ্য বা ইউনাইটেড কিংডম থেকে ১৯৮৮ সালে স্বাধীনতা লাভ করে দেশটি।

কোস্টারিকা

"মধ্য আমেরিকার সুইজারল্যান্ড" হিসেবে পরিচিত কোস্টারিকা দেশটিতেও নেই কোনো নিজস্ব সেনাবাহিনী। দেশটির সংবিধানই বলা আছে দেশটিতে কোনো সামরিক বাহিনী থাকবে না। সামরিক বাহিনী ছাড়া বিশ্বের বৃহত্তম দেশগুলির মধ্যে একটি এই কোস্টারিকা। জানা যায়, ১৯৪৮ সালে দেশটিতে ঘটে যাওয়া একটি ভয়ঙ্কর গৃহযুদ্ধের কারণে দেশটি তাদের সামরিক বাহিনী শেষ করে দেয়। এরপর ১৯৪৯ সাল থেকে কোস্টারিকার সরকার কোনও সশস্ত্র বাহিনী গঠন করেনি। তবে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলির সমাধানে এবং প্রতিরক্ষার কাজে রয়েছে পুলিশবাহিনী। কোস্টারিকাতেই জাতিসংঘের ‘শান্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ অবস্থিত।

আইসল্যান্ড

আইসল্যান্ড ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ। এটি ন্যাটোর একটি সদস্য রাষ্ট্র। সৌন্দর্যের দিক থেকেও আইসল্যান্ডের কোনও তুলনা হয় না। তবে ন্যাটোর সদস্য হলেও দেশটিতে নেই কোনও স্থায়ী সামরিক বাহিনী। কারণ স্বয়ং ন্যাটো-ই দ্বীপ রাষ্ট্রটিকে রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে। ন্যাটোর সদস্য হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেশটির যাবতীয় সুরক্ষা ভার নিয়েছে। তাই দেশটির সীমান্তেও কোনো সেনাবাহিনী নেই।

লিশটেনস্টাইন

লিশটেনস্টাইন পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম স্বাধীন রাষ্ট্রগুলির মধ্যে একটি। দেশটির মোট আয়তন মাত্র ১৬০ বর্গকিলোমিটার। এটি একটি রাজপুত্র-রাজ্য, অর্থাৎ একজন রাজপুত্র এলাকাটি শাসন করেন। ১৮৬৮ সালে, ইউরোপের কেন্দ্রে থাকা এই ছোট্ট দেশটি আর্থিক কারণে তাদের সামরিক বাহিনী বাতিল করে দিয়েছে। তবে বর্তমানে দেশটি ছোট হলেও সমৃদ্ধ। দেশটিতে স্থায়ী সামরিক বাহিনী না থাকলেও, যুদ্ধের সময় সেনাবাহিনী গঠন করার অনুমতি আছে, তবে কোনোদিন তার প্রয়োজন পড়েনি। 

গ্রেনাডা

ক্যারিবিয়ান সাগরের লেসার অ্যান্টিলেসের উত্তর অংশে অবস্থিত একটি দ্বীপ রাষ্ট্র ​গ্রেনাডা। এর আয়তন ৩৪৪ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় এক লক্ষ পাঁচ হাজার। ১৯৩৩ সালে গ্রেনাডায় মার্কিন আক্রমণ হয়। এরপর থেকে দেশটির আর কোনও নিজস্ব সামরিকবাহিনী নেই। তবে রয়্যাল গ্রানাডা পুলিশ ফোর্স নামে একটি পুলিশবাহিনী রয়েছে, যেটি উপকূলীয় নিরাপত্তা রক্ষাকারী হিসেবেও কাজ করে।

অ্যান্ডোরা

ইউরোপের ছোট্ট একটি দেশ অ্যান্ডোরা। ১২৭৮ খ্রিষ্টাব্দে দেশটি প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশটির আয়তন মাত্র ৪৭৮ বর্গকিলোমিটার। আ্যান্ডোরা দেশটির নিজস্ব কোনো সামরিক বাহিনী নেই, তবে প্রয়োজনে স্পেন ও ফ্রান্স দেশটিকে সুরক্ষিত করতে ও নিরাপদ রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সামোয়া

প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত একটি ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র হলো সামোয়া। এ দ্বীপরাজ্যটি নিউজিল্যান্ড থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে ১৯৬২ সালে। দেশটির নিজস্ব কোনো সেনাবহিনী ও পুলিশ বাহিনী নেই। তবেও তারা তাদের বিশেষ বাহিনী দ্বারা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকে। এছাড়া দেশটি ১৯৬২ সালে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে একটি চুক্তি করে। যেখানে বলা আছে, সামোয়ায় যদি কোনো যুদ্ধ বা বাইরের দেশের আক্রমণের মতো ঘটনা ঘটে- তবে নিউজিল্যান্ডের সাহায্য নেবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url