যে কারণে কাশ্মীরে ভূস্বর্গ বলা হয়।

সারা পৃথিবীর কাছে ভূস্বর্গ হিসেবে পরিচিত কাশ্মীর। কেউ কেউ আবার ভালোবেসে এটিকে ‘প্রেম-পর্যটন’ কিংবা ‘রোমান্সের শহর'ও বলে থাকেন। কাশ্মীরের মতো এত বাহারি রূপ পৃথিবীর আর কোথাও দেখা মেলে না। যেন সৃষ্টিকর্তা তার সবটুকু দিয়ে এর অপরূপ সৌন্দর্য তৈরি করেছেন। কি নেই এখানে? তুষারের চাদরে জড়ানো পর্বত, উপত্যকা, খরস্রোতা পাহাড়ি নদী, বাহারি ফুলের বাগান, সবুজ মাঠ আর উইলো বনের সৌন্দর্যে সবই আছে। চোখ জুড়ানো এসব সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসেন কাশ্মীরে।

কাশ্মীর

অবস্থান

মূলত ভারত, পাকিস্তান এবং চীন; এ তিনটি দেশে ছড়িয়ে আছে কাশ্মীরের পরিধি। ভারতের নিয়ন্ত্রণে কাশ্মীরের শতকরা ৪৫ ভাগ অঞ্চল রয়েছে৷ বেশিরভাগ কাশ্মীরি এখানেই বাস করেন। পাকিস্তানের দখলে রয়েছে কাশ্মীরের ৩৫ শতাংশ। আর বাকি ২০ শতাংশ আছে চীন এর দখলে। তবে কাশ্মীরকে, মূলত দুটি অংশে ভাগ করা হয়। একটি ভারতশাসিত "জম্মু কাশ্মীর" এবং অন্যটি পাকিস্তান অধিভুক্ত "আজাদ কাশ্মীর"।

দর্শনীয় স্থান

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে পর্যটকদের কাছে আলাদা কদর রয়েছে কাশ্মীরের। প্রতি ঋতুতে এখানকার রূপ বদলায়। মৌসুমটা গ্রীষ্ম হোক, শরৎ কিংবা শীত, কাশ্মীরের সৌন্দর্য কমে না কখনোই। বসন্তে যেমন এখানে ফুল ফোটে, তেমনি শরতে এসে সেটা আরো বিকশিত হয়। গ্রীষ্মে সবুজে আর শীতের সময় তুষারে ঢাকা পড়ে যায় গোটা কাশ্মীর। পৃথিবীর ভূস্বর্গ কাশ্মীরে এমন কয়েকটি স্থান আছে, যেখানে না গেলে আপনার কাশ্মীর ভ্রমণই হয়ে যেতে পারে বৃথা! সেটি কোন কোন স্থান? চলুন দেখা যাক-

গুলমার্গ

কাশ্মীরকে কেন ভূস্বর্গ বলা হয়, তা গুলমার্গে গেলেই ভ্রমণকারীরা টের পান। কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে প্রায় ৫২ কি.মি দূরে অবস্থিত এ জায়গায় গেলে মনে হবে, যেন সুইজারল্যান্ডের কোনো বরফ ঢাকা শহর। বলিউডের অনেক সেরা ছবির শুটিং এখানে হয়েছে। গুলমার্গ নামের অর্থ হলো, ফুলের উপত্যকা। এখানে বরফ গলে গলে, নিচে কেবল ফুল দেখা যায়। এসব ফুল পর্যটকদের আকর্ষণের একটি কারণ। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে বদলে যায় গুলমার্গের সৌন্দর্য। প্রকৃতির এমন সৌন্দর্য পৃথিবীর অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এছাড়াও গুলমার্গে আছে পৃথিবীর সবচাইতে উঁচু গলফ কোর্স, যা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ২৪০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত।

শ্রীনগর

সৌন্দর্যে কম যায় না কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরও। অপরূপ সৌন্দর্য্যের এ নগরের প্রাণ কেন্দ্র হচ্ছে "ডাল হ্রদ"। শীতকালে ডাল হ্রদ পুরোপুরি জমে যায়, হ্রদের উপর দাঁড়িয়ে থাকা ‘হাউজ বোট’ গুলোকে তখন  স্বর্গের শৈল্পিক প্রাসাদ মনে হয়। এছাড়া শ্রীনগরেই আছে এশিয়ার সবচেয়ে বড় টিউলিপ বাগান "ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল টিউলিপ গার্ডেন"। ৯০ প্রজাতির ১৮ লক্ষ টিউলিপ আছে এই বাগানে। পর্যটকরা ঘুরতে এলে রঙিন বাগানের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করেন।

পেহেলগাম

শ্রীনগর থেকে প্রায় ৯৭ কিমি দূরে অবস্থিত "পেহেলগাম"। এ জায়গাটাতেই আছে কাশ্মীরের বিখ্যাত আপেল। এখানকার রাস্তার দু’পাশে কেবল আপেলের বাগান। জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে গেলে গাছে আপেল দেখা যায়।

সেনমার্গ

কাশ্মীরের সুন্দর জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম আরেকটি হলো "সোনমার্গ"। সোনালি ঘাসে ঢাকা এ জায়গাটি স্বর্ণের উপত্যকা হিসেবেও পরিচিত।শ্রীনগর থেকে সোনমার্গ যাওয়ার পুরো পথটাতে দেখা যায় দামাল সিন্ধুনদ, পাহাড় আর বিভিন্ন ধরনের গাছ।

বেতাব ভ্যালি

আরেকটি আকর্ষণীয় স্থান বেতাব ভ্যালি। ঘন সবুজ বৃক্ষরাজিতে আচ্ছাদিত এ জায়গাটির সৌন্দর্য বোঝা যায় গ্রীষ্মকালে। তখন চারদিকে কেবল সবুজের সমারোহ থাকে। আর বিচিত্র সব বন্য ফুলে ছেয়ে যায় তৃণভূমি। শুধু তা-ই নয়, নদী আর জলাভূমিগুলোও তখন পানিতে টইটম্বুর হয়ে ওঠে। আর পাহাড়গুলো হয়ে যায় বনভূমিতে পরিপূর্ণ। এছাড়া, পাহাড়ের ওপর অদ্ভূত সমতল রাস্তাগুলো রোমাঞ্চকর বাইকিংয়ের জন্যও বেশ জনপ্রিয়।

সিন্ধু ভ্যালি

এছাড়া ঘুরে আসতে পারেন সিন্ধু নদের তীরেই অবস্থিত সিন্ধু ভ্যালিতেও। একসময় সিন্ধু ভ্যালি ছিল বিখ্যাত সিল্ক রোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।ছবির মতো সুন্দর এ উপত্যকাটি ভারত, চীন ও মধ্য এশিয়াকে সংযুক্ত করেছে।

কাশ্মীরের নারী

প্রকৃতির মতো কাশ্মীরের মেয়েদের রূপের খ্যাতিও সারা বিশ্ব জুড়ে বিস্তৃত। পৃথিবীর আর কোনো দেশের সাথে যেন তাদের মিল নেই। যেন আকাশ থেকে স্বর্গের পরীরা এসে ভিড় জমিয়েছে এখানে।

কাশ্মীরী নারীর সৌন্দর্য

কাশ্মীরী কন্যাদের মসৃণ ত্বক, উজ্জ্বল চুল সবসময় থাকে চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে। ত্বকের সমস্যা, বলিরেখা কিংবা চুল ঝরে যাওয়ার মতো কোনও খুঁত নেই তাঁদের। অথচ এই অপরূপ সৌন্দর্য্য পেতে, তাদের বাড়তি কোনো প্রসাধনী ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। জিনগতভাবেই এমন অপরূপ সৌন্দর্য্যের অধিকারী হয়ে থাকে এখানকার মেয়েরা। অবশ্য তাদের সৌন্দর্যের আরেকটি কারণ হলো, কাশ্মীরের মনোরম পরিবেশ আর শীতল আবহাওয়া। দূষণ মুক্ত পরিবেশ আর সতেজ প্রকৃতির ছোঁয়াতেই, আজীবন ভরপুর থাকে তাঁদের রূপ লাবণ্য। এছাড়াও এখানকার জাফরান, আমন্ড, দুধ এবং মালাইয়ের ফেসপ্যাকও তাদের রূপের আরেক রহস্য।

জাফরান ও শাল

কাশ্মীরের শালও পুরো বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত। এগুলোর বেশিরভাগই এখানকার নারীদের হাতে বোনা। বিশ্বের সর্বাধিক মূল্যবান মসলা "জাফরানের" জন্মভূমিও কাশ্মীর। পৃথিবীতে এত ভাল জাফরান আর কোথাও পাওয়া যায় না। সব মিলিয়ে কাশ্মীর সত্যিই যেন পৃথিবীর স্বর্গ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url