দেশ পরিচিতি: জাম্বিয়া

আফ্রিকা মহাদেশের পূর্বাঞ্চলের একটি রাষ্ট্র জাম্বিয়া। দেশটির রাজধানীর নাম লুসাকা। এর আয়তন ৭৫২,৬১৪ বর্গকিমি। জাম্বিয়াকে অনেকে জিম্বাবুয়ে বলে ভুল করে থাকেন। তবে এ দুটি পুরোপুরি ভিন্ন স্বাধীন দেশ।

অবশ্য ১৯৬৪ সালের আগ পর্যন্ত এ দুটো দেশ বিভক্ত ছিলো। খরস্রোতা জাম্বেজি নদীর দুই পাড়ের এই দুই দেশ একসাথে ছিল, যাকে রোডেশিয়া নামে পরিচিত ছিলো৷ পরবর্তীতে রোডেশিয়া দু’ভাগ হয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম দুটি রাষ্ট্র। একটি হলো জাম্বিয়া আর অন্যটি জিম্বাবুয়ে।

পৃথিবীর সবচেয়ে লাজুক মানুষের দেশ হিসেবে জাম্বিয়া সবার কাছে ব্যাপক ভাবে সমাদৃত। সেখানকার নারী ও পুরুষেরা এতোটাই লাজুক যে, এক মাত্র জৈবিক চাহিদা পূরন করা ছাড়া একসাথে হয়ে আর কোনো কাজই খুব একটা করেন না। তবে নারী পুরুষ উভয়ই স্বাধীনভাবে যার যার কাজ করতে পারে। কেউ কারো কাজে বাঁধা সৃষ্টি করে না।

জাম্বিয়া দেশ

কোন সুইমিংপুলে অনেকগুলো পুরুষ একসাথে গোসল করা অবস্থায় সেখানে যদি কোন মহিলা আসে তাহলে পুরুষরা সেখান থেকে উঠে চলে যায়। এমনকি জাম্বিয়ান পুরুষেরা তাদের নিজের স্ত্রীর সাথেও সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে লজ্জা পায়। এতটাই লাজুক এ জাতি! এই দেশের মানুষেরা প্রয়োজনের বাইরে কথা বলে না। বাড়তি কথা বলতে জাম্বিয়ানরা খুবই লজ্জা পায়।


এছাড়াও দেশটিতে এমন কিছু অদ্ভুত ব্যাপার রয়েছে যা সবাইকে অবাক করে দেয়। যেমন জাম্বিয়ানদের বাড়িতে যদি কেউ বেড়াতে আসে, তাহলে তারা ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে বসতে দেয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত তার জন্য বরাদ্দ চেয়ারটি ধুয়ে মুছে পরিষ্কার না হয়ে যাবে। এখানে কাউকে খাবার প্রস্তাব না দিয়ে তাকে জোর করে খেতে দেওয়া হয়। তারা মনে করে একজন ব্যক্তিকে খাবার খাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া মানে তাকে অসম্মান করা। এতে সেই ব্যক্তি যদিও ক্ষুধার্ত থাকে তবুও সে বলতে পারে না সে ক্ষুধার্ত।


আরো পড়ুন : শতবর্ষী মানুষের দ্বীপ ইকারিয়া।


আবার খাওয়ার সময় সকলে মিলে খেতে বসতে হয়। যতই দেরি হোক, প্রত্যেকে একত্রে বসেছে কি না, তা নিশ্চিত হবার পর খেতে আরম্ভ করে এই দেশের পরিবারের লোকজন। এছাড়াও এখানকার মানুষেরা দুই হাতে খাবার খাওয়া খুবই অপছন্দ করে। তাদের কাছে দুই হাতে খাওয়া মানে খাবারের আয়োজককে কে অপমান করা। খাবার শেষে প্লেটের এককোনে অল্প একটু খাবার তারা রেখে দেয় কাজের লোকের জন্য।

লাজুক জাতি জাম্বিয়া

সবচেয়ে অদ্ভুদ ব্যাপার হলো খাবার খুব স্বাদ হলেও প্রশংসা করার নিয়ম নেই সেখানে, বড়জোর ধন্যবাদ দেয়া যাবে। প্রশংসা শুনলে জাম্বিয়ানরা লজ্জা পান।


জাম্বিয়া পশু পাখিদের অভয়ারন্য হিসেবেও সারা বিশ্বে বেশ পরিচিত। একে জিরাফের দেশও বলা যায়। পশু পাখিদের জন্য সেখানকার প্রকৃতি যেন আশীর্বাদের মতোই। ভিক্টোরিয়া ফলসের কারণে জাম্বিয়ার পাশ্ববর্তী ফরেস্টে দিনরাত ২৪ ঘন্টাই অনবরত বৃষ্টি হতে থাকে।


পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মানবসৃষ্ট লেকটি জাম্বিয়ায় অবস্থিত।“লেক কারিবা” নামে এ লেকটিকে প্রথম দেখায় অনেকই সাগর ভেবে ভূল করে থাকেন। চারদিকে সবুজ পাহাড়, তাঁর বুকে একেবেকে নীলাভ জলের অঞ্চল। এই লেকে দেখতে পাওয়া যায় নানা প্রজাতির রঙিন মাছের মেলা। আর পুরোটা ঘুরে দেখার জন্য সেখানে আছে স্পিড বোটের ব্যবস্থাও।


যেসব দেশে বাল্যবিবাহের প্রকোপ অত্যন্ত বেশী তার মধ্যে জাম্বিয়া অন্যতম। এই দেশটিতে মেয়েদেরকে অল্প বয়সে বিয়ে দেয়া শুধু তাদের সংস্কৃতির অংশই নয়, বরং আর্থিক সমৃদ্ধির একটি উপায়। তবে বর্তমানে অনেকেই হাজার বছরের এই সংস্কৃতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জেগে উঠছেন অন্ধকারের বিপরীতে।


সাম্প্রতিক অনুমান অনুসারে, জাম্বিয়ার বেশিরভাগ মানুষই খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী। দেশটিতে মুসলমানের সংখ্যা ৭৩ হাজারের মতো। এছাড়া অন্যান্য ধর্মালম্বী মানুষও আছে। সব ধর্মাবলম্বীরা নির্বিঘ্নে তাদের ধর্ম পালন করতে পারেন দেশটিতে।


জাম্বিয়ানদের প্রধান ভাষা হলো ইংরেজি। এছাড়াও দেশটিতে আরো ৩৫টি ভাষা প্রচলিত আছে। যেগুলো কম বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে আন্তর্জাতিক কাজকর্মে সাধারণত তাদের প্রধান ভাষা ইংরেজিই ব্যবহার করা হয়।

পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর একটি জাম্বিয়া। তবে দরিদ্র হলেও সুন্দর জীবন যাপনের কারণে দুঃখ সহজে গ্রাস করতে পারে না জাম্বিয়ানদের।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url