পানিতে বিপদগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করে ডলফিন!
স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মাঝে মানুষের পর সবচেয়ে বুদ্ধিমান বলা হয় ডলফিনকে। এরা নিজেদের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে খুব সহজেই মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। অনেকের ধারণা ডলফিন মানুষের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু সত্যিট হলো, অন্যান্য জলচর প্রাণীদের তুলনায় ডলফিন দারুণ বন্ধুসুলভ। শুধু তাই নয়, ডলফিন পানিতে ডুবন্ত মানুষকেও সাহায্য করে।
বিষয়টি শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য,এমন অনেক ঘটনা আছে, যেখানে পানিতে বিপদগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করতে দেখা যায় ডলফিনদের। এরা সবসময় সমুদ্র উপকূলবর্তী নদীগুলোতে অবস্থান করে। সাধারণত মানুষের সঙ্গ পাওয়ার আশাতেই লোকালয়ের আশপাশের নদী বা সমুদ্রে প্রায়ই দেখা যায় তাদের। তাই ডলফিনের ঝাঁক, সমুদ্রে পথহারা নাবিককে উপকূল খুঁজে পেতে সাহায্য করে।
গবেষণায় দেখা যায়, ডলফিন অন্যপ্রাণীদের মতো সারাদিন শুয়েবসেও থাকে না। সবসময় সমুদ্রের উপকূলবর্তী অঞ্চলে দাপাদাপি করে সাঁতরে বেড়াতে থাকে এ উচ্ছল সামুদ্রিক প্রাণীটি। পানিতে বিপদগ্রস্ত মানুষকে বারবার প্রাণ বাঁচিয়েছে ডলফিন। মানুষের সাথে তার অকৃত্রিম বন্ধুত্ব থেকেই মানুষের বিপদে এগিয়ে আসে তারা।
একবার ১৯৯৬ সালে, মিসরের সিনাই উপদ্বীপে লোহিত সাগরে সাঁতার কাটছিলেন মার্টিন রিচার্ডসন নামের এক ব্রিটিশ ডুবুরি। সেখানে এক হাঙরের আক্রমণের শিকার হন তিনি। তার বাকি ডুবুরি বন্ধুরা কিছুটা দূরে ছিল৷ তখন দূর থেকে তারা দেখতে পান, তিনটি বোতলমুখো ডলফিন রিচার্ডসনের কাছে এসে ঘোরাঘুরি করছে। এরপর নিজেদের পাখনা ও লেজ ঝাপটে হাঙরটিকে ভয় দেখাচ্ছিল তারা। ডলফিনের ভয়ে দ্রুত সেখান থেকে সরে পড়ে হাঙ্গরটি। ডলফিনদের সহযোগীতায় রিচার্ডসন সে যাত্রা বেঁচে ফিরেন।
২০০০ সালে এমনই আরেকটি ঘটনা ঘটে ইতালির পূর্ব উপকূলের অ্যাড্রিয়াটিক সাগরে। ১৪ বছর বয়সী এক কিশোর তার বাবার সঙ্গে নৌকায় ঘুরছিল। হঠাৎ ছেলেটি নৌকা থেকে পড়ে যায়। ছেলেটি সাঁতার জানত না। কিন্তু সে সময় অলৌকিকভাবে একটি ডলফিন ছেলেটির কাছে আসে৷ তারপর ছেলেটিকে তার মাথার উপর এমন ভাবে ধরে রাখে যাতে সে ডুবে না যায়। ডলফিন ছেলেটিকে নৌকার কাছে নিয়ে এলে তার বাবা তাকে কোলে তুলে নেন। ডলফিনটির নাম ছিল ফিলিপ্পো। এরপর ফিলিপ্পো সে এলাকার মানুষদের প্রিয় বন্ধু হয়ে উঠে।
আরেকটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটে ২০০৪ সালে। নিউজিল্যান্ডের সমুদ্রে সাঁতার কাটছিলেন চারজন লোক। কিছুক্ষণ পর কয়েকটা ডলফিন তাদেরকে ঘিরে ঘুরতে থাকে। তারা ভেবেছিল প্রাণীগুলো হয়তো তাদের সাথে খেলছিল। প্রায় ৪০ মিনিট ধরে এভাবে ঘুরতে থাকে তারা। তখন লোকগুলে বুঝতে পারে, কাছেই থাকা বিশাল আকৃতির এক সাদা হাঙরের হাত থেকে তাদের বাঁচাতে এমনটি করছে প্রাণীগুলো। শেষমেষ কোন উপায় করতে না পেরে হাঙরটি ফিরে যায়।
এছাড়াও ২০০৭ সালে টড এনড্রিস নামের এক সার্ফার হাঙরের আক্রমণের শিকার হন। হাঙরটি এনড্রিসের ঘাড়ে ও পায়ে কামড় দেয়। প্রথমে সাহায্যে এগিয়ে আসতে না পারলেও, কিছুক্ষণ পর তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখা যায় একঝাঁক ডলফিনকে। এনড্রিসকে উপকূলে পৌঁছে দেওয়ার আগ পর্যন্ত তার পাশে ছিল প্রাণীগুলো।
শুধু এই কয়েকটিই নয়, এমন আরো অনেক ঘটনা আছে। ডলফিন নামের এ স্তন্যপায়ী প্রাণীটি বহুবার বহু মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে। কিন্তু ডলফিন কেন মানুষকে সাহায্য করে, এ বিষয়টি এখনো বিজ্ঞানীরা স্পষ্টভাবে বুঝে উঠতে পারেননি৷ তবে তারা নিয়মিত গবেষণা করে যাচ্ছেন। সম্পূর্ণ নিশ্চিত নয়, তবে তাদের ধারণা, মানুষের সমান মগজ আছে এই প্রাণীর৷ এদের বুদ্ধিমত্তা দিয়েই এরা মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসে।
এছাড়াও আরো অনেকদিক থেকে ডলফিনের সাথে মানুষের মিল রয়েছে। এরা মানুষের মতো সামাজিক প্রাণী। তাই তারা সবসময় দল বেঁধে জীবনযাপন করে। পর্যবেক্ষণ করে আরো একটি মজার তথ্য দেন বিজ্ঞানীরা। তারা মনে করেন ডলফিন আয়নায় নিজেদের চিনতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের বালটিমোরে অবস্থিত জাতীয় অ্যাকুয়ারিয়ামের গবেষকদের ধারণা, তাদের এই ক্ষমতা উচ্চতর সহানুভূতির এবং পরোপকারী আচরণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তবে দুঃখজনক ব্যাপার হলো, ডলফিন মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু হয়ে যেভাবে মানুষকে সাহায্য করছে, তার বিপরীতে মানুষ তাদের সাথে বন্ধুর সতো আচরণ করছে না।
বিভিন্ন পটুয়াখালীর বিভিন্ন সমুদ্রসৈকতে ভেসে এসেছে অসংখ্য মৃত ডলফিন। ওয়ার্ল্ডফিশের ইকোফিশ অ্যাকটিভিটির গবেষণা সহযোগী সাগরিকা স্মৃতি, যেখানে সেখানে জাল ফেলে মাছ শিকার করাকে এর মূল কারণ হিসেবে দায়ী করেন।
এছাড়াও সুন্দরবনের কিছু অসাধু জেলে মাছ মারতে বিষ দেন এবং সে বিষের প্রভাবে মারা পড়ে ডলফিনও। অন্যদিকে মাছ ধরার জন্য জেলেদের ফেলা ছেঁড়া জাল, সমুদ্রে ফেলা আবর্জনা, বিশেষ করে পলিথিনের কারণে ক্ষতির মুখে পড়ছে ডলফিনদের জীবন।
❤️